যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ও অংশীদারদের মধ্যে জাপান অন্যতম। তিনি আশ্বস্ত করেছেন, টোকিও কোনো ইস্যুতে সহায়তা বা সমর্থন চাইলে ওয়াশিংটন সবসময় পাশে থাকবে। সোমবার (২৭ অক্টোবর) জাপান সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির সঙ্গে বৈঠকে এই আশ্বাস দেন ট্রাম্প।
বৈঠকের আগে উভয় নেতা করমর্দন করে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। সেই সময় ট্রাম্প বলেন, “এটা খুবই দৃঢ় একটি করমর্দন।” পরে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় তিনি জাপানকে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম কৌশলগত সহযোগী হিসেবে আখ্যা দেন এবং বলেন, “জাপান আমাদের ঘনিষ্ঠতম মিত্রদের একটি। আমি আপনাকে বলতে চাই— যে কোনো সময় কোনো বিষয়ে আপনার প্রশ্ন বা সংশয় দেখা দিলে, কিংবা কোনো সহায়তা প্রয়োজন হলে, আপনি সবসময় আমাদের পাশে পাবেন।”
বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা জোরদারে দুটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। প্রথম চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র জাপানকে বিরল খনিজ উপাদান ও ধাতু সরবরাহ করবে। দ্বিতীয় চুক্তিতে জাপান ফোর্ড কোম্পানির তৈরি এফ–১৫০ ট্রাক কেনার বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছায়।
চুক্তি স্বাক্ষরের পর ট্রাম্প বলেন, “আজকের দিনটি যুক্তরাষ্ট্র–জাপান সম্পর্কের জন্য একটি নতুন অধ্যায় সূচনা করল। আমরা শুধু বাণিজ্যে নয়, প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি ও জ্বালানি ক্ষেত্রেও আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চাই।”
প্রধানমন্ত্রী তাকাইচি ট্রাম্পের প্রশংসা করে বলেন, “সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে প্রায়ই আপনার নেতৃত্ব ও অগ্রসর কূটনীতির কথা বলতেন। আজকের বৈঠক আমাদের পারস্পরিক বন্ধুত্বকে আরও দৃঢ় করল।”
বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্প প্রশাসন যে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিরল খনিজ উপাদান বিষয়ক চুক্তি করছে, তা মূলত চীনের বৈশ্বিক একচেটিয়া প্রভাব কমানোর প্রচেষ্টা। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে বিরল খনিজ উপাদানের বেশির ভাগ সরবরাহ চীনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যা উন্নত প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গত মাসেও ট্রাম্প অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে একই ধরনের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। সেই ধারাবাহিকতায় জাপানের সঙ্গে নতুন চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত সরবরাহ চেইন বৈচিত্র্যকরণের অংশ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
দুই দেশের এই নতুন সমঝোতা কেবল বাণিজ্যিক নয়, কৌশলগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র জাপানকে ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা জোরদারের অন্যতম অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করছে। অপরদিকে, টোকিওও ওয়াশিংটনের সহায়তায় নিজস্ব প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে।
জাপান সফরের সময় ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্র জাপানের সঙ্গে “পারস্পরিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতা” আরও সম্প্রসারণে আগ্রহী। তিনি বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চল গড়ে তুলতে জাপানের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
সোমবারের বৈঠক ও চুক্তিসমূহ যুক্তরাষ্ট্র–জাপান সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। বাণিজ্য, প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা ও ভূরাজনীতিতে দুই দেশের সহযোগিতা ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলে ক্ষমতার ভারসাম্য পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
সূত্র: আরটি, এএফপি