অর্থনীতি ডেস্ক
২০২৫ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটা পিএলসি। প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি প্রান্তিকে কোম্পানির মোট রাজস্ব আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫১১ দশমিক ৪০ কোটি টাকা, যা আগের প্রান্তিকের তুলনায় ১ দশমিক ৭ শতাংশ কম হলেও ২০২৪ সালের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে চলমান মুদ্রাস্ফীতি, ক্রয়ক্ষমতার চাপ ও খরচ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটেও রবি কর-পরবর্তী মুনাফা (পিএটি) হিসেবে অর্জন করেছে ২৪২ দশমিক ৩০ কোটি টাকা। কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এটি আগের বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় ২৮ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।
রবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জিয়াদ সাতারা আর্থিক ফলাফল নিয়ে বলেন, দ্বিতীয় প্রান্তিকে তুলনামূলকভাবে অনুকূল অর্থনৈতিক পরিবেশ থাকায় তখন ফলাফল ভালো ছিল। তৃতীয় প্রান্তিকে দীর্ঘায়িত বর্ষা মৌসুমের কারণে গ্রাহকদের টেলিকম সেবায় ব্যয় কিছুটা কমেছে। তবে ব্যয় ব্যবস্থাপনা কর্মসূচিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে, যা কোম্পানির টেকসই প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২৫ সালের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে রবির আয়কর, অবচয় ও অবচয়ন বাদে মুনাফা (ইবিআইটিডিএ) দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৯৩ দশমিক ১ কোটি টাকা, যার মার্জিন ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ। আগের প্রান্তিকের তুলনায় ইবিআইটিডিএ ৪ শতাংশ এবং গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে।
সরকারের কোষাগারে অবদানের ক্ষেত্রে কোম্পানিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তৃতীয় প্রান্তিকে রবি সরকারকে কর ও অন্যান্য রাজস্ব খাতে জমা দিয়েছে ১ হাজার ৩৮২ দশমিক ৭ কোটি টাকা, যা তাদের ওই প্রান্তিকের মোট আয়ের ৫৫ শতাংশের সমান। একই সময় কোম্পানির মূলধনি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩১৪ দশমিক ৯ কোটি টাকা।
প্রতি শেয়ারে আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৪৬ টাকা, যা আগের প্রান্তিকের তুলনায় ৫ দশমিক ৯ শতাংশ কম হলেও গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় ২৮ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করে।
গ্রাহকসংখ্যার দিক থেকেও রবি তৃতীয় প্রান্তিকে সামান্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর শেষে কোম্পানির মোট সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৭৫ লাখ, যা আগের প্রান্তিকের তুলনায় ১ লাখ বেশি। একই সময়ে ডেটা গ্রাহকের সংখ্যা বেড়েছে ৭ লাখ, মোট ডেটা গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৪৮ লাখে।
তৃতীয় প্রান্তিকে নতুনভাবে ১১ লাখ ফোর–জি গ্রাহক যুক্ত হওয়ায় মোট ফোর–জি গ্রাহকসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৯৬ লাখে। ফলে রবির মোট গ্রাহকের ৭৭ দশমিক ৯ শতাংশ এখন ডেটা ব্যবহারকারী এবং ৬৯ শতাংশ ফোর–জি সেবাগ্রাহী। এ হার দেশের টেলিকম খাতে সর্বোচ্চ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ফোর–জি সেবা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রেও রবি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি জানিয়েছে। চলতি প্রান্তিক শেষে কোম্পানির ফোর–জি সাইটের সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার ৫০০-তে পৌঁছেছে। এর মাধ্যমে দেশের প্রায় ৯৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ মানুষ ফোর–জি সেবার আওতায় এসেছে।
কোম্পানির মতে, চলমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও কার্যকর ব্যয় নিয়ন্ত্রণ, নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও ডেটা সেবায় ক্রমবর্ধমান চাহিদা রবির ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাকে সুদৃঢ় করেছে।