আন্তর্জাতিক ডেস্ক
কেনিয়ার উপকূলীয় অঞ্চল কোয়ালে কাউন্টিতে একটি ছোট যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হয়ে অন্তত ১২ জনের মৃত্যুর আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সকালে দুর্ঘটনাটি ঘটে। বিমানটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য মাসাই মারা ন্যাশনাল রিজার্ভে যাচ্ছিল।
কোয়ালে কাউন্টি কমিশনার স্টিফেন ওরিন্ডে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-কে জানিয়েছেন, দুর্ঘটনাস্থল ডিয়ানি এয়ারস্ট্রিপ থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ি ও বনাঞ্চল এলাকায় অবস্থিত। বিমানে থাকা সবাই বিদেশি পর্যটক ছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তবে তাদের জাতীয়তা এখনও নিশ্চিত করা যায়নি।
কেনিয়া সিভিল এভিয়েশন অথরিটি (KCAA) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সেসনা ক্যারাভান ধরনের ওই বিমানটি উড্ডয়নের কয়েক মিনিটের মধ্যেই দুর্ঘটনায় পতিত হয় এবং বিধ্বস্ত হওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গেই আগুন ধরে যায়। বিমানে মোট ১২ জন আরোহী ছিলেন—এর মধ্যে পাইলটসহ সকলেরই মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে।
উদ্ধারকর্মীরা দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে ধ্বংসস্তূপ থেকে দেহাবশেষ ও বিমানটির বিভিন্ন অংশ উদ্ধার করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দারাও উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা এপি’কে জানিয়েছেন, “আমরা একটি বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শুনে ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে আগুনে পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তূপ ও ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা দেহাবশেষ দেখতে পাই।”
বিমানটির মালিকানা প্রতিষ্ঠান মোম্বাসা এয়ার সাফারি জানিয়েছে, তারা কেনিয়া সিভিল এভিয়েশন অথরিটি এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যৌথভাবে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে কাজ করছে। কোম্পানির এক মুখপাত্র বলেন, “আমরা গভীরভাবে মর্মাহত। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত অনুমানভিত্তিক কোনো মন্তব্য থেকে বিরত থাকছি। দুর্ঘটনা সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য সরকারি সূত্র থেকেই জানানো হবে।”
কেনিয়ার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে প্রযুক্তিগত ত্রুটি বা প্রতিকূল আবহাওয়া পরিস্থিতি বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে সুনির্দিষ্ট কারণ জানতে ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার ও বিশ্লেষণ প্রয়োজন হবে।
কোয়ালে উপকূল থেকে মাসাই মারা পর্যন্ত এই আকাশপথটি কেনিয়ার অন্যতম ব্যস্ত অভ্যন্তরীণ পর্যটন রুট হিসেবে পরিচিত। প্রতি বছর শত শত পর্যটক এই পথে বিমানযোগে মাসাই মারা ন্যাশনাল রিজার্ভে যান। তবে অতীতে এ রুটে বেশ কয়েকটি ছোট আকারের বিমান দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে, যা স্থানীয় বিমান চলাচল নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
মাসাই মারা ন্যাশনাল রিজার্ভ আফ্রিকার অন্যতম বিখ্যাত বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। প্রতিবছর এখানে তানজানিয়ার সেরেঙ্গেটি অঞ্চল থেকে লাখো বন্য প্রাণী—বিশেষ করে উইল্ডবিস্ট, জেব্রা ও গজেল—অভিবাসন করে আসে, যা দেখতে হাজার হাজার বিদেশি পর্যটক কেনিয়া ভ্রমণ করেন। এই অভিবাসনকে আফ্রিকার “গ্রেট মাইগ্রেশন” বলা হয়।
কেনিয়ার সরকার ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলে বিশেষ তদন্ত দল পাঠিয়েছে। নিহতদের মরদেহ শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া চলছে এবং সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসগুলোকেও অবহিত করা হয়েছে।
সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্ত শেষ হলে দুর্ঘটনার বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে এবং প্রয়োজনে বিমান চলাচল নিরাপত্তা নীতিতে নতুন নির্দেশনা দেওয়া হবে।