আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে সৈন্য পাঠানোর খবরকে ‘সম্পূর্ণ মনগড়া ও ভিত্তিহীন’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান। মঙ্গলবার দেশটির তথ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, সিআইএ ও মোসাদের সঙ্গে ইসলামাবাদের কোনো ধরনের সমঝোতা বা চুক্তি হয়নি।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয়, গাজায় শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর বিষয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য সম্পূর্ণরূপে অসত্য এবং বিভ্রান্তিকর। মন্ত্রণালয় জানায়, ইসলামাবাদ ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়নি এবং দুই দেশের মধ্যে কোনো কূটনৈতিক বা সামরিক সম্পর্ক নেই।
এর আগে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত তথাকথিত ‘গাজা শান্তি চুক্তি’র আওতায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর সৈন্য নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলিটি ফোর্স–আইএসএফ) গঠন করা হবে, যেখানে পাকিস্তান অংশগ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ওই খবরে বলা হয়, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী গাজায় শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে ভূমিকা রাখবে এবং এ জন্য প্রায় ২০ হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে পাকিস্তানের তথ্য মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে জানায়, “পাকিস্তানের নেতৃত্ব, সিআইএ কিংবা মোসাদের মধ্যে এমন কোনো বৈঠক, আলোচনা বা চুক্তি হয়নি। এই ধরনের খবর সম্পূর্ণ কাল্পনিক এবং ভিত্তিহীন।” মন্ত্রণালয় আরও জানায়, পাকিস্তান সর্বদা ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের পক্ষে নীতিনিষ্ঠ অবস্থান বজায় রেখেছে।
তথ্য মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করে জানায়, সেনাবাহিনীর গণমাধ্যম শাখা (আইএসপিআর) কিংবা কোনো বিশ্বস্ত আন্তর্জাতিক সূত্র থেকে গাজায় পাকিস্তানি সেনা পাঠানোর কোনো পরিকল্পনার বিষয়ে নিশ্চিত করা হয়নি। পাশাপাশি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের কিছু প্রতিবেদনের সমালোচনা করে পাকিস্তান বলেছে, এসব প্রতিবেদন অতীতে বহুবার বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করেছে, যা পাকিস্তানবিরোধী প্রচারণার অংশ।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “পুরো প্রতিবেদনটি পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি বিকৃতভাবে উপস্থাপন ও মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে অবিশ্বাস সৃষ্টির উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।” ইসলামাবাদ মনে করে, এই ধরনের ভুয়া সংবাদ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য ক্ষতিকর এবং ফিলিস্তিন প্রশ্নে মুসলিম দেশগুলোর ঐক্য নষ্ট করার অপচেষ্টা।
তবে ইসলামাবাদের একাধিক সরকারি সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গঠিত গাজা শান্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনীতে পাকিস্তানের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সূত্রগুলো বলেছে, দেশটির সরকার ও সামরিক মহলে আইএসএফ বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে, তবে কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
একজন জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা বলেন, “আদর্শগতভাবে পাকিস্তান জাতিসংঘের ম্যান্ডেটের অধীনে পরিচালিত শান্তিরক্ষী কার্যক্রমে অংশ নিতে আগ্রহী। তবে গাজা এখনো অত্যন্ত অস্থিতিশীল, এবং এই মুহূর্তে সরাসরি সৈন্য মোতায়েনের আইনি কাঠামোও স্পষ্ট নয়।”
পাকিস্তান জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী কার্যক্রমে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। দেশটি এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০টি মিশনে দুই লাখের বেশি সেনা পাঠিয়েছে। এ অভিজ্ঞতার কারণে ইসলামাবাদ শান্তিরক্ষী উদ্যোগে অবদান রাখতে সক্ষম বলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিবেচিত হয়।
তবে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ জনমত গাজা ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারকরা। অনেক পাকিস্তানি নাগরিক ফিলিস্তিনপন্থী এবং তারা কোনো ধরনের অংশগ্রহণকে ইসরায়েলি স্বার্থে কাজ করা বা ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখতে পারেন। এ কারণেই ইসলামাবাদ বিষয়টি নিয়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সরকারি সূত্রগুলো বলছে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখা হবে এবং জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্পষ্ট ম্যান্ডেট ছাড়া গাজায় পাকিস্তানি সেনা পাঠানোর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে না। পাকিস্তানের অবস্থান, তারা কেবল শান্তিপূর্ণ সমাধান ও মানবিক সহায়তা প্রচেষ্টার পক্ষে রয়েছে, যা ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।