আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি হামলায় বুধবার অন্তত ১৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নির্দেশনায় গাজার বিভিন্ন স্থানে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলার মূল সূত্রপাত ঘটে রাফাহ এলাকায়, যেখানে বন্দুক হামলায় এক ইসরায়েলি সৈন্য আহত হন। এ ঘটনার পরই ইসরায়েলি সেনারা তৎক্ষণাৎ প্রতিক্রিয়ামূলক অভিযান পরিচালনা করে।
হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসাম ব্রিগেডস ইসরায়েলের এই অভিযানকে যুদ্ধবিরতির চুক্তি লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেছে। তারা জানিয়েছে, একই সঙ্গে নিখোঁজ এক বন্দির মরদেহ হস্তান্তর স্থগিত রাখা হবে। কাসাম ব্রিগেডস সতর্ক করেছে, যদি ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বড়সড় উস্কানি বা অতিরিক্ত হামলা ঘটে, তবে গাজায় মৃতদেহ উদ্ধারের কার্যক্রম ব্যাহত হবে এবং বাকি ১৩ জন জিম্মির মরদেহ উদ্ধার বিলম্বিত হবে।
অপরদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে.ডি. ভ্যান্স দাবি করেছেন, সংঘটিত হামলার পরও যুদ্ধবিরতি এখনও টিকে আছে। ওয়াশিংটন ডিসিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, “ছোটখাটো সংঘর্ষ হতে পারে। আমরা জানি গাজায় একজন ইসরায়েলি সৈন্য আহত হয়েছেন। আশা করা যায়, ইসরায়েল উপযুক্ত জবাব দেবে, তবে শান্তি অব্যাহত থাকবে।”
রাফাহ এলাকায় সংঘটিত ঘটনায় হামাসের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দলটি জানিয়েছে। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানায়, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল এখন পর্যন্ত অন্তত ৯৪ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা পৌঁছানোও কঠোরভাবে সীমিত রাখা হচ্ছে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে তুলেছে।
হামাস এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের সর্বশেষ হামলাকে যুদ্ধবিরতির “স্পষ্ট লঙ্ঘন” বলে অভিহিত করে আগ্রাসন বন্ধের দাবি জানিয়েছে। হামাস নেতা সুহাইল আল-হিন্দি বলেছেন, মরদেহ উদ্ধারে কিছু অসুবিধার মুখোমুখি হচ্ছে দলটি এবং বাকি মরদেহ উদ্ধারে যে বিলম্ব হচ্ছে তার দায়ও ইসরায়েলের ওপর বর্তায়।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে চলমান উত্তেজনা, রাজনৈতিক ও সামরিক দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে এই হামলার ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বন্দি ও মরদেহ হস্তান্তর, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন এবং সীমান্ত সংক্রান্ত উত্তেজনা পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা সতর্ক করেছেন, এই ধরনের ঘটনা সংঘটিত হলে সামগ্রিক শান্তি প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য ও মানবিক সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আহতদের চিকিৎসা ও জরুরি ত্রাণ পৌঁছে দিতে ইসরায়েলি অভিযানের কারণে বিভিন্ন এলাকায় সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয় এবং মৌলিক সেবা প্রদানে জটিলতা দেখা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, গাজা উপত্যকা দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ও সামরিক সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত। ইসরায়েলি হামলা ও হামাসের প্রতিক্রিয়া নিয়মিতভাবে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বাড়াচ্ছে এবং স্থানীয় জনগণের ওপর মারাত্মক মানবিক প্রভাব ফেলছে।