আন্তর্জাতিক ডেস্ক
পর্তুগালে বসবাসরত অভিবাসীদের জন্য এসেছে এক বড় দুঃসংবাদ। দেশটির সংসদে সম্প্রতি পাস হয়েছে নতুন নাগরিকত্ব আইন, যেখানে পর্তুগিজ নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য বৈধভাবে বসবাসের সময়সীমা দ্বিগুণ করে পাঁচ বছরের পরিবর্তে ১০ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে।
নতুন এই আইনটির নাম ‘জাতীয়তা আইন সংশোধনী-২০২৫’, যা আগামী ১৯ জুন ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে। পর্তুগাল সরকার জানিয়েছে, দেশের নাগরিকত্ব ব্যবস্থা আরও দায়িত্বশীল ও একীভূত সমাজ গঠনের লক্ষ্যে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।
পূর্বে পাঁচ বছরের বৈধ বসবাস শেষে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যেত। নতুন আইনে এই সময়সীমা বাড়িয়ে ১০ বছর করা হয়েছে। তবে পর্তুগিজ ভাষাভাষী দেশগুলোর সম্প্রদায়—সিপিএলপি (CPLP) যেমন ব্রাজিল, অ্যাঙ্গোলা, মোজামবিক ইত্যাদির নাগরিকদের জন্য কিছুটা ছাড় রেখে সময়সীমা সাত বছর নির্ধারণ করা হয়েছে।
নতুন আইনে উল্লেখ করা হয়েছে, রেসিডেন্সির সময় গণনা শুরু হবে প্রথম রেসিডেন্স পারমিট ইস্যুর তারিখ থেকে। অর্থাৎ, পারমিট অনুমোদনের অপেক্ষার সময় এখন থেকে আর বৈধ বসবাস হিসেবে গণনা করা হবে না। এর ফলে যারা পারমিট পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করছেন, তাদের নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রক্রিয়া আরও দীর্ঘ হতে পারে।
পর্তুগালের নাগরিকত্ব পেতে আবেদনকারীদের এখন থেকে কেবল ভাষা নয়, সংবিধান, ইতিহাস ও নাগরিক দায়িত্ববোধ সম্পর্কিত বিষয়ে নতুন পরীক্ষা দিতে হবে। এছাড়া আবেদনকারীদের একটি সংবিধানিক অঙ্গীকারপত্রে স্বাক্ষর করতে হবে, যেখানে তারা পর্তুগালের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও আইনের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করবেন।
আগে তিন বছরের বেশি কারাদণ্ড না হলে নাগরিকত্বের আবেদন গ্রহণযোগ্য ছিল। কিন্তু নতুন আইনে বলা হয়েছে, যে কোনো ধরনের কার্যকর কারাদণ্ড থাকলেই আবেদন বাতিল হতে পারে। এমনকি নাগরিকত্ব পাওয়ার পর কেউ যদি গুরুতর অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়, তার নাগরিকত্বও বাতিল করার ক্ষমতা থাকবে সরকারের হাতে।
আগে পর্তুগালে জন্ম নেওয়া অভিবাসী বাবা-মায়ের সন্তান স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্বের সুযোগ পেত। নতুন আইন অনুযায়ী, শিশুর নাগরিকত্বের জন্য এখন থেকে বাবা-মায়ের অন্তত তিন বছর বৈধভাবে পর্তুগালে বসবাস থাকতে হবে। এই শর্ত পূরণ না হলে আবেদন গ্রহণ করা হবে না।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নতুন আইন পূর্ববর্তী আবেদনকারীদের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে ইতোমধ্যে নাগরিকত্বের অপেক্ষায় থাকা হাজারো অভিবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। অনেক বিশেষজ্ঞের ধারণা, এই আইন আদালতে সংবিধানবিরোধী হিসেবে চ্যালেঞ্জ হতে পারে, কারণ এটি বহু অভিবাসীর বৈধ প্রত্যাশা ও অধিকার লঙ্ঘন করছে।
নতুন এই নাগরিকত্ব আইন কার্যকর হলে ইউরোপে বসবাসরত বাংলাদেশি, ভারতীয়, পাকিস্তানি এবং অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীদের জন্য নাগরিকত্ব অর্জন আরও কঠিন হয়ে পড়বে বলে অভিবাসন বিশ্লেষকরা মনে করছেন।