জাতীয় ডেস্ক
ঢাকা, ২৯ অক্টোবর ২০২৫: বাংলা চলচ্চিত্রের অমর নায়ক সালমান শাহর মৃত্যু আজও এক রহস্য হিসেবে রয়ে গেছে। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় তার মৃত্যুর পর অনেক প্রশ্নের জন্ম নিয়েছে—এটি কি স্বাভাবিক মৃত্যু ছিল, না আত্মহত্যা, নাকি হত্যাকাণ্ড? সবার মনেই প্রশ্ন, আর এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য আজও চলেছে বিতর্ক।
এই আলোচিত অভিনেতার মৃত্যুর পর, তার পরিবার সালমান শাহকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ তুলেছে। সালমান শাহর মা, নীলা চৌধুরী দাবি করেছেন, তার ছেলে আত্মহত্যা করেননি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। তার অভিযোগের আঙুল, সালমানের স্ত্রী সামিরার দিকে। এই অভিযোগে সামিরাকে মামলার এক নম্বর আসামি করা হয়েছে।
সামিরা, সালমান শাহর মৃত্যুর পর খুব বেশি গণমাধ্যমের মুখোমুখি হননি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তার সাক্ষাৎকারে অনেক অজানা তথ্য তুলে ধরেছেন। তিনি জানান, সালমান শাহ তার জন্মদিনে কখনও বিশেষ কিছু পালন করতেন না, বরং অন্যের জন্য সবসময় চিন্তা করতেন। তবে তার জন্মদিনে তিনি স্বাভাবিকভাবেই কিছু বিশেষ ব্যবস্থা করতেন। একবার ১১ তলা ভবন থেকে তাকে চোখ বেঁধে নিচে নামানো হয় এবং পরে চোখ খুলে তিনি দেখতে পান একটি লাল গাড়ি উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছে, যা দর্শকরা জানেন।
এছাড়া, সালমান শাহ ও সামিরার সম্পর্কের সম্পর্কেও বিভিন্ন মত রয়েছে। সামিরার মতে, তারা দুজন একে অপরকে অনেক ভালোবাসতেন এবং তাদের মাঝে কখনও কোনো বড় সমস্যা হয়নি। তবে, সালমানের মায়ের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটেনি, এবং তার দাবি, বিয়ের পর থেকেই নীলা চৌধুরী তাকে অপছন্দ করতে শুরু করেন।
এদিকে, সালমানের মৃত্যুর দিনে, সামিরা বলেছিলেন, সেদিন সালমানের সাথে তার কিছু কথা কাটাকাটি হয়েছিল, কিন্তু সেটা আত্মহত্যার কোনো কারণ ছিল না। তিনি আরও বলেন, সালমান শাহের আত্মহত্যার চেষ্টা করার ইতিহাস ছিল—তিনবার এর আগেও সে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে।
সামিরা জানান, সেদিন সালমানের মরদেহ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে, সেদিন থেকেই সালমানের পরিবার তার কাছ থেকে দূরে সরে যায়, এবং তার কাছে কোনো আভাস দেওয়া হয়নি যে তার স্বামীকে শেষবারের মতো দেখার সুযোগ পাওয়া যাবে।
সালমানের মা, নীলা চৌধুরী দাবি করেছেন, তার ছেলের মৃত্যু হত্যাকাণ্ড ছিল, এবং তিনি আলোচিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক থাকার অভিযোগ তুলেছেন। তবে, সামিরা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং বলেন, এগুলো পুরোপুরি ভিত্তিহীন।
সালমান শাহর মৃত্যুর পরপরই রমনা থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা ফাইল করা হয়। তবে, সালমানের মা বিষয়টি হত্যাকাণ্ড হিসেবে দেখিয়ে মামলার তদন্ত পুনরায় শুরু করেন। ২৯ বছর পর, আদালত এবার সালমান শাহর মৃত্যুর বিষয়টি হত্যা হিসেবে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক এই আদেশ দিয়েছেন, এবং রমনা থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন মামলার তদন্ত শুরু করার জন্য। তদন্তের মাধ্যমে নতুন তথ্য বেরিয়ে আসলে, এই মৃত্যু রহস্যের পর্দা উন্মোচন হতে পারে।