আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
যুদ্ধবিরতি পুনরায় কার্যকর রাখার ঘোষণা দিয়েও গাজায় নতুন করে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। বুধবার (৩০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় উত্তর গাজার বেইত লাহিয়ায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত দুইজন নিহত হয়েছেন। এর আগে, মঙ্গলবার রাতের হামলায় শতাধিক মানুষ নিহত হন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। হামলার পর জাতিসংঘ শান্তি প্রচেষ্টাকে ‘হাতছাড়া না করতে’ সব পক্ষকে আহ্বান জানিয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলি বাহিনী গাজা শহরের উত্তরাংশে বেইত লাহিয়া এলাকায় হামলা চালায়, এতে অন্তত দুইজন নিহত হন। আল-শিফা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা এমন একটি স্থানে হামলা চালিয়েছে যেখানে অস্ত্র মজুত ছিল এবং সেগুলি তাদের সেনাদের জন্য ‘তাৎক্ষণিক হুমকি’ তৈরি করেছিল।
এ হামলার ফলে গাজার অস্ত্রবিরতি পরিস্থিতি আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। গত মঙ্গলবার দক্ষিণ গাজার রাফাহ এলাকায় ইসরায়েলি সেনা নিহত হওয়ার পর ইসরায়েল প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ‘প্রতিশোধমূলক জোরালো হামলার’ নির্দেশ দেন। ওই হামলায় ১০৪ জন নিহত হন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু ছিলেন, এবং ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা হামাসের সিনিয়র যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে এই হামলা করেছে।
এরপর, বুধবার দুপুরে ইসরায়েল আবারও যুদ্ধবিরতি পুনরায় কার্যকর রাখার ঘোষণা দেয়, তবে কিছু সময় পরেই গাজায় নতুন হামলা চালায় তারা। এই ঘটনার পর জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য এবং জার্মানি শান্তি প্রচেষ্টাকে ‘হাতছাড়া না করতে’ সব পক্ষকে আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফান ডুজারিক এক বিবৃতিতে বলেছেন, গুতেরেস গাজার বেসামরিক মানুষের ওপর ইসরায়েলি বিমান হামলার নিন্দা করেছেন। হামলায় বহু শিশুও নিহত হয়েছে, যা অত্যন্ত ‘ভয়াবহ’ ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার তুর্কও বলেন, “এত বিপুল সংখ্যক হতাহতের খবর ভয়াবহ। শান্তি যেন হাতছাড়া হতে না দেয় সে বিষয়ে সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানাই।” এ ধরনের আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নও একই ধরনের অবস্থান নিয়েছে।
অন্যদিকে, হামাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রাফাহে যে ঘটনায় এক ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে, তার সঙ্গে তাদের যোদ্ধাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা তাদের অস্ত্রবিরতি মানার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। তবে সাম্প্রতিক হামলার কারণে ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া স্থগিত রেখেছে হামাস। তারা জানিয়েছে, ইসরায়েলের নতুন হামলা চলতে থাকলে “বন্দিদের মরদেহ উদ্ধার অভিযানে বাধা সৃষ্টি করবে।”
এছাড়া, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ রেডক্রসের প্রতিনিধিদের ফিলিস্তিনি বন্দিদের সঙ্গে সাক্ষাতের ওপর আনুষ্ঠানিকভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ইসরায়েল দাবি করেছে, এমন সাক্ষাৎ নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, তবে হামাস এই নিষেধাজ্ঞাকে বন্দিদের অধিকার লঙ্ঘন বলে আখ্যা দিয়েছে। তাদের মতে, যুদ্ধ চলাকালে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যত চলমান ছিল এবং এটি “ইসরায়েলের ধারাবাহিক হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন ও অনাহারে রাখার নীতিরই অংশ।”
এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মহলের কাছে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, যেখানে একদিকে যুদ্ধবিরতির আওতায় শান্তির প্রতি আশাবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে, অন্যদিকে এ ধরনের হামলা শান্তি প্রচেষ্টাকে আরও কঠিন করে তুলছে।