আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
দক্ষিণ কোরিয়ার বুসান নগরীতে আগামী দিনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের প্রথম বৈঠক। প্রায় ছয় বছর পর এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যেখানে মূলত চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ, প্রযুক্তি, এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজসম্পদ নিয়ে আলোচনা হবে।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর এই বৈঠকটি হবে দুই নেতার প্রথম সরাসরি আলোচনা। বৈঠকের লক্ষ্য মূলত পারস্পরিক উদ্বেগ নিরসন এবং দুই দেশের মধ্যে একটি ‘সম্মিলিত ধারণা’ বা কনসেনসাসে পৌঁছানো। বাণিজ্য, প্রযুক্তি, এবং খনিজসম্পদ—বিশেষ করে ‘রেয়ার আর্থ মিনারেলস’—এই বৈঠকের প্রধান আলোচ্য বিষয় থাকবে। এই খনিজগুলো বর্তমানে বৈশ্বিক অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যেমন স্মার্টফোন, বৈদ্যুতিক গাড়ি, যুদ্ধবিমান ও ড্রোন তৈরিতে অপরিহার্য।
চীন বর্তমানে বিশ্বের ‘রেয়ার আর্থ মিনারেলস’ এর প্রধান সরবরাহকারী দেশ, এবং এই খনিজের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশাধিকার পেতে চীনের সঙ্গে আলোচনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। গত কিছু সময় ধরে ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞা তালিকায় কিছু চীনা কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত করার পর, চীন এসব খনিজের রপ্তানি সীমাবদ্ধ করেছে। ট্রাম্প আশা করছেন, এই বৈঠকের মাধ্যমে দুই দেশ এই সংকটের সমাধান খুঁজে বের করতে পারবে।
এছাড়া, ট্রাম্প এই বৈঠকে চীনের সঙ্গে টিকটকের মালিকানা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোনো প্রতিষ্ঠানের হাতে হস্তান্তরের ব্যাপারে চূড়ান্ত চুক্তি চান। একই সঙ্গে তিনি চীনকে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকদের জন্য সয়াবিন আমদানি পুনরায় শুরু করার জন্য আহ্বান জানাবেন।
বেইজিংও এই বৈঠকে কিছু দাবি উত্থাপন করবে। চীন দাবি করবে, উন্নত কম্পিউটার চিপের বাজারে প্রবেশাধিকার সহজ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করা এবং ফেন্টানিল সম্পর্কিত শুল্ক প্রত্যাহার করা। এর পাশাপাশি, বন্দর ফি সংশোধনের বিষয়েও আলোচনা হতে পারে।
এ বৈঠকটি ২০১৯ সালের জাপানের ওসাকায় অনুষ্ঠিত জি২০ সম্মেলনের পর প্রথম মুখোমুখি বৈঠক হতে চলেছে, যেখানে দুই নেতার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে মতবিনিময় হয়েছিল। শি জিনপিং তখন বলেছিলেন, কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৪০ বছরে দুই দেশই সহযোগিতার মাধ্যমে লাভবান হয়েছে, আর বিরোধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি আরও বলেছিলেন, “সংঘাতের চেয়ে সংলাপ ও সহযোগিতাই ভালো পথ।”
উল্লেখযোগ্য যে, ২০১৯ সালের বৈঠকে ট্রাম্প আশ্বাস দিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনের পণ্যের ওপর নতুন কোনো শুল্ক আরোপ করবে না। একইসঙ্গে, বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে মতবিরোধ সংযতভাবে মোকাবিলা করার বিষয়ে একমত হন তারা।
এই বৈঠকটি দুটি দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বর্তমানে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে, এবং বিশ্ব বাণিজ্য, প্রযুক্তি, এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ইস্যুগুলোর জন্য এটি বিশেষ প্রভাব ফেলবে।