আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
জাতিসংঘের পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) এর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে—এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, ইরান এখনো পরমাণু অস্ত্র বিস্তাররোধ চুক্তি (এনপিটি) অনুযায়ী কাজ করছে এবং এটি একটি “বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপ”।
আইএইএ প্রধান গ্রোসি, নিউইয়র্কে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কোনো চেষ্টা করেনি এবং তার সংস্থা কখনো এমন কোনো কার্যক্রম দেখতে পায়নি, যা থেকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সূচনা হতে পারে। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “না, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে না, এবং অতীতেও বানায়নি।”
গ্রোসি আরও জানান, আইএইএ গত জুনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে যে ইরানের কোনো গোপন পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি নেই। তিনি বলেন, “আমরা এমন কিছু দেখিনি যা থেকে বোঝা যায়, সেখানে বাস্তবিক কোনো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাজ চলছে।”
এ সময় গ্রোসি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর আন্তর্জাতিক মনিটরিং সংস্থা আইএইএ এর নিয়ন্ত্রণ ও সহযোগিতার গুরুত্বও তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, ইরান গত কয়েক মাস ধরে আইএইএ এর সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়নের চেষ্টা করেছে, বিশেষ করে সম্প্রতি ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য ইরানের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের প্রক্রিয়া শুরু করার পর।
গ্রোসি বলেন, “তেহরান কর্মকর্তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে তারা এখনো পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তাররোধ চুক্তির কাঠামোর মধ্যেই থাকতে চায়।” ইরানও এই বিষয়ে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে, তারা দাবি করেছে যে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি কেবল শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে, বিশেষত বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বেসামরিক প্রয়োজনে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এদিকে, গত ২৮ আগস্ট ইউরোপীয় দেশ ফ্রান্স, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্য (ই-থ্রি) ইরানের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করতে ‘স্ন্যাপব্যাক’ ব্যবস্থা সক্রিয় করার ঘোষণা দেয়। তাদের অভিযোগ, ইরান ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি (জেসিপিওএ) লঙ্ঘন করেছে। তবে, ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র ওই চুক্তি থেকে একতরফাভাবে বের হয়ে যাওয়ার পর থেকে এ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র বিরোধ চলছে।
এছাড়া, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনার কারণে আইএইএ জুন মাসে নিরাপত্তাজনিত কারণে ইরান থেকে তাদের পরিদর্শক দল সরিয়ে নেয়। তবে গ্রোসি জানান, তিনি নিয়মিতভাবে ইরানী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রোসি তার বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করেন, ইরানের সঙ্গে এই সংস্থার সম্পর্ক অটুট রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তারা যেকোনো উন্নতির জন্য সচেষ্ট।