আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
দক্ষিণ কোরিয়ায় দেওয়া এক বক্তব্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে পাকিস্তানের অবস্থানকে আরও জোরালো করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, চলতি বছরের মে মাসে পাকিস্তান-ভারত সংঘাতে সাতটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছিল, যা পাকিস্তানের বক্তব্যকে কূটনৈতিকভাবে শক্তিশালী করেছে। ট্রাম্পের মন্তব্য ভারতের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, কারণ নয়াদিল্লি এই দাবির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত কয়েক মাসে অন্তত ২৫ বার প্রকাশ্যে বলেছেন যে, চলতি বছরের মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে পাকিস্তান ৫ থেকে ৭টি যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে। যদিও এই ঘটনায় দুই দেশের যুদ্ধবিমান হারানোর প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, তবে ট্রাম্পের মন্তব্য পাকিস্তানের অবস্থানকে কূটনৈতিকভাবে সমর্থন দিয়েছে, এমনটাই বলছেন বিশ্লেষকেরা।
ট্রাম্পের মতে, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পরিস্থিতি প্রায় তৈরি হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু তিনি দুই দেশকে ২৫০ শতাংশ শুল্কের হুমকি দিয়ে যুদ্ধ থামাতে সক্ষম হন। দক্ষিণ কোরিয়ায় এক আঞ্চলিক বৈঠকে তিনি আরও বলেন, “তারা তখন যুদ্ধরত ছিল এবং সাতটি বিমান গুলি করে নামানো হয়েছিল।” তিনি পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের প্রশংসা করে বলেন, “তিনি একজন দুর্দান্ত যোদ্ধা এবং অসাধারণ মানুষ।”
ট্রাম্পের এই মন্তব্যে ভারতের প্রতি তার সমর্থন স্পষ্ট হয়, তবে তিনি পাকিস্তানের নেতাদের প্রশংসা করতেও ভোলেননি। তিনি বলেন, “পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের মুখে ছিল, কিন্তু আমি এটি থামিয়ে দিয়েছি।” এমনকি তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকেও একজন দারুণ নেতা হিসেবে আখ্যা দেন।
এদিকে, ভারত সরকার দাবি করছে, পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতে তারা কোন যুদ্ধবিমান হারায়নি, এবং ট্রাম্পের মধ্যস্থতার দাবি “ভিত্তিহীন” বলে উড়িয়ে দিয়েছে। নয়াদিল্লি বলছে, দুই দেশ পারস্পরিক আলোচনা এবং সমঝোতায় যুদ্ধবিরতি স্থাপন করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের পাকিস্তানের প্রতি কৌশলগত সম্পর্ক বৃদ্ধির ইঙ্গিত পাওয়া যায়। উইলসন সেন্টারের বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, মার্কিন প্রশাসন পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর সুযোগ দেখতে পাচ্ছে, বিশেষ করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সম্প্রতি পাকিস্তানকে “মিত্র” হিসেবে অভিহিত করেছেন।
এছাড়া, ট্রাম্পের মন্তব্যের পর ভারতের কূটনৈতিক পটভূমিতে নতুন উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ট্রাম্পের মন্তব্যের পর আসিয়ান সম্মেলনে অনলাইনে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেস একে “কূটনৈতিক পিছু হটা” বলে সমালোচনা করেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত সংঘাত নিয়েও মন্তব্য করেছেন, যা তিনি “সহজে সমাধানযোগ্য” বলে উল্লেখ করেন। তিনি পাকিস্তানের নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, “পাকিস্তানের নেতা দারুণ মানুষ।” তবে, যদিও তিনি পাকিস্তানের প্রতি সহানুভূতির পরিচয় দিয়েছেন, তার বক্তব্যে ভারতকে সাথে নিয়ে একটি বড় বাণিজ্যিক চুক্তির প্রসঙ্গও রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই মন্তব্য আন্তর্জাতিকভাবে পাকিস্তানের দাবিকে কিছুটা সমর্থন দিলেও, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক অগ্রাধিকার এখনও ভারতের সাথে সম্পর্ক জোরদার করতেই রয়েছে।