অর্থনীতি ডেস্ক
চাকরিচ্যুতি অবৈধ ঘোষণা ও নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ইসলামী ব্যাংকের চাকরিচ্যুত কর্মকর্তারা। শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন ব্যাংকটির বিভিন্ন শাখা থেকে সম্প্রতি চাকরিচ্যুত হওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা চাকরি পুনর্বহাল এবং চলমান নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিতের দাবিতে স্লোগান দেন। কর্মসূচিতে তারা জানান, কোনো কারণ ছাড়াই এবং যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ব্যাপকসংখ্যক কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করেছে। পরবর্তীতে নতুন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে ওই শূন্যপদ পূরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়, যা তারা ‘বেআইনি ও অযৌক্তিক’ বলে দাবি করেন।
এর আগে, বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে ঢাকার পঞ্চম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে একটি মামলা করা হয়। মামলায় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের চাকরিচ্যুতির সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা ও নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার আবেদন জানানো হয়। আদালত ওই বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে সমন জারি করে বিবাদীদের আগামী ১৪ জানুয়ারি আদালতে হাজির থাকার নির্দেশ দেন।
প্রসঙ্গত, প্রায় পাঁচ হাজার কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করার পর ইসলামী ব্যাংক সম্প্রতি নতুন জনবল নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেয়। ব্যাংকটি আগামীকাল ট্রেইনি অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার এবং ট্রেইনি অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার (ক্যাশ) পদে নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করেছে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে চাকরিচ্যুত কর্মকর্তারা শুক্রবারের মানববন্ধনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা এস. এম. এমদাদ হোসাইন। তিনি বলেন, নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই তারা ব্যাংকে যোগ দিয়েছিলেন এবং পদোন্নতিও পেয়েছেন যোগ্যতার ভিত্তিতে। কিন্তু কোনো পূর্বসতর্কতা বা কারণ না জানিয়ে তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালুর মাধ্যমে ব্যাংকের বর্তমান বোর্ড ‘বেআইনি পদক্ষেপ’ নিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, “আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পেতে চাই। যেভাবে আমাদের চাকরি কেড়ে নেওয়া হয়েছে, তা কেবল ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, আমাদের পরিবারগুলোর ওপরও গভীর প্রভাব ফেলেছে।”
নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করার আহ্বান জানিয়ে এমদাদ হোসাইন বলেন, “যারা পরীক্ষায় অংশ নিতে যাচ্ছেন, তাদের আমরা ভাই-বোন হিসেবে অনুরোধ করছি—এই প্রক্রিয়া বেআইনি ও অমানবিক। এতে যোগ দিলে আপনারাও একই পরিণতির মুখে পড়তে পারেন।”
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন মোক্তার হুসেন রসিদ ও মোহাম্মদ হুমায়ুনসহ চাকরিচ্যুত অন্যান্য কর্মকর্তারা। তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে ইসলামী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি হারিয়ে এখন চরম মানবিক সংকটে পড়েছেন। বক্তারা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপের মাধ্যমে চাকরিগুলো পুনর্বহালের আহ্বান জানান।
চাকরিচ্যুত কর্মকর্তারা জানান, দাবি বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হলে তারা ভবিষ্যতে আরও বৃহত্তর কর্মসূচি গ্রহণ করবেন। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা বলেন, এই সমস্যা কেবল ব্যক্তিগত নয়; এটি আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ও ব্যাংকিং সেক্টরের ন্যায্যতা রক্ষার বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
তাদের অভিযোগ, একযোগে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নীতি, শ্রম আইন এবং মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার সুষ্ঠু প্রক্রিয়ার সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। মামলার রায়ের মাধ্যমে যদি আদালত এই সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করেন, তবে তা দেশের ব্যাংকিং খাতে নিয়োগ ও চাকরিচ্যুতি সংক্রান্ত নীতিমালায় গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে পারে।
মানববন্ধন শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয় দুপুরের দিকে। উপস্থিত কর্মকর্তারা জানান, তারা আইনি প্রক্রিয়ায় ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এবং আদালতের নির্দেশনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন।