অর্থনীতি ডেস্ক
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানকে ঢাকায় নিযুক্ত আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূত আবদেল ওহাব সালদানি একটি নৌকার প্রতিকৃতি উপহার দিয়েছেন। শনিবার (১ নভেম্বর) রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে অনুষ্ঠিত আলজেরিয়া বিপ্লবের ৭১তম বার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে এই উপহার দেওয়া হয়। উপহারটি পাওয়ার পর সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি আলোচনায় আসে, যা নিয়ে উপদেষ্টা নিজেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
রোববার (২ নভেম্বর) নিজের ফেসবুক পেজে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান লিখেছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মনোনয়নে তিনি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন। সেখানে আলজেরিয়া দূতাবাসের পক্ষ থেকে তাকে পালতোলা দাঁড় চালনাকারী মাঝিসহ একটি নৌকার প্রতিকৃতি উপহার দেওয়া হয়। তিনি উল্লেখ করেন, কূটনৈতিক সৌজন্যের অংশ হিসেবেই তিনি উপহারটি গ্রহণ করেছেন।
উপদেষ্টা বলেন, “উপহারটিতে দূতাবাসের নাম লিখিত আছে। লক্ষ্য করুন, এর সঙ্গে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীকের কোনো মিল নেই।” এ বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি সামাজিক মাধ্যমে তৈরি হওয়া বিভ্রান্তি নিরসনের চেষ্টা করেন।
উপহারটির ভবিষ্যৎ ব্যবহারের বিষয়ে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ফেসবুক পোস্টে পরামর্শও চান। তিনি লেখেন, “এখন আমি এটি আলজেরিয় দূতাবাসে ফেরত পাঠাতে পারি—তবে সেটা অসৌজন্যমূলক হতে পারে। সরকারি তোশাখানায় জমা দিতে পারি, যদিও এটি মূল্যবান কোনো উপহার নয়; শৈলান প্রবীণ নিবাসে রাখতে পারি বা নিজে রেখে দিতে পারি।”
অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ঢাকাস্থ আলজেরিয়া দূতাবাস, যা দেশটির ১৯৫৪ সালের ঐতিহাসিক বিপ্লবের স্মরণে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কূটনৈতিক শিষ্টাচারের অংশ হিসেবে বিদেশি দূতাবাসগুলোর এমন প্রতীকী উপহার প্রদান সাধারণ ঘটনা। তবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে “নৌকা” প্রতীকটি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক হওয়ায় এ বিষয়টি জনমনে নানা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের প্রতীকী উপহারকে রাজনৈতিক প্রতীকের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। তাই সরকারি কর্মকর্তারা সাধারণত এমন উপহার গ্রহণের পর তা সরকারি তোশাখানায় জমা দেন, যাতে ভবিষ্যতে কোনো প্রকার ভুল ব্যাখ্যা না হয়।
ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিলেও সরকার বা সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের ব্যাখ্যা ও পরামর্শ চাওয়ার আহ্বান তার ব্যক্তিগত স্বচ্ছতা বজায় রাখার একটি উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এদিকে, কূটনৈতিক মহলের একাধিক সূত্র জানায়, রাষ্ট্রদূতের উপহারটি সম্পূর্ণ সৌজন্যমূলক ছিল এবং কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এতে জড়িত নয়। এমন উপহার বিনিময় কূটনৈতিক প্রথার অংশ, যা বিভিন্ন দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদারে ভূমিকা রাখে।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞদের মত, সরকারি কর্মকর্তাদের এ ধরনের পরিস্থিতিতে স্বচ্ছতা বজায় রাখাই উচিত, যাতে কোনো প্রতীক বা উপহার রাজনৈতিক ব্যাখ্যার জন্ম না দেয়। বর্তমান ঘটনার ক্ষেত্রে উপদেষ্টার দ্রুত ব্যাখ্যা সেই স্বচ্ছতার উদাহরণ হিসেবে উল্লেখযোগ্য।