আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্রেটিক পার্টির অন্যতম শীর্ষ নেতা বারাক ওবামা বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আইনবহির্ভূত শাসন ও বেপরোয়া মনোভাব’ মোকাবিলায় দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। রোববার যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের নরফোক শহরে এক জনসভায় তিনি এই আহ্বান জানান।
ওবামা বলেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন গভীর সংকটে রয়েছে এবং এই অবস্থায় ডেমোক্র্যাটদের দায়িত্ব হলো গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক শাসন রক্ষায় সোচ্চার হওয়া। তাঁর ভাষায়, “চলুন আমরা এই আইনবহির্ভূত ও বেপরোয়া শাসনের মুখোমুখী হই। এটা এখন জরুরি, কারণ আমাদের দেশ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা এক অন্ধকার সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।”
ভার্জিনিয়া ও নিউ জার্সির গভর্নর নির্বাচন উপলক্ষে দলের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা শুরু করেন ওবামা। নরফোকের ওল্ড ডমিনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আয়োজিত ওই সমাবেশে তিনি বলেন, “আমি জানি যে কোন জায়গা থেকে প্রতিবাদ শুরু করা উচিত, তা নির্ধারণ করা কঠিন। কারণ প্রতিদিনই হোয়াইট হাউস থেকে এমন সব সিদ্ধান্ত আসছে, যা কেবল বিভ্রান্তিকর নয়, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জন্যও হুমকি।”
ওবামা উদাহরণ হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসনের বৈদেশিক বাণিজ্যশুল্কনীতি এবং সামরিক মোতায়েন সংক্রান্ত পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “এমন এক নীতিকে আমি ভয়াবহ মনে করি, যা ব্যবসায়ী ও আইনজীবীরা কোনো সমালোচনা ছাড়াই মেনে নিয়েছেন। একইভাবে কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই বিভিন্ন শহরে সেনা মোতায়েন করা সংবিধানবিরোধী। রিপাবলিকান এমপিরা নিজেরাও বুঝতে পারছেন যে প্রেসিডেন্টের অবস্থান অস্বাভাবিক, কিন্তু তাঁরা কিছু করতে পারছেন না। তাই এখন আমাদের এগিয়ে আসতেই হবে।”
একই দিন নিউ জার্সির নেওয়ার্ক শহরেও প্রচারণা সভায় অংশ নেন ওবামা। সেখানে তিনি বলেন, “ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর প্রতিটি দিন আমেরিকার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি কার্যক্রম অচল হয়ে পড়ছে, জরুরি পরিষেবাগুলো অর্থ সংকটে ভুগছে, অথচ তিনি বিলাসবহুল স্থাপনা নির্মাণে বিপুল অর্থ ব্যয় করছেন।”
ওবামা বর্তমানে ডেমোক্রেটিক পার্টির সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতাদের একজন হিসেবে বিবেচিত। ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি একটানা দুই মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং সাংবিধানিক মেয়াদ পূর্ণ করেন। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব শেষে তিনি পুনরায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হয়েছেন এবং দলীয় প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণায় নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্কনীতির বিরুদ্ধে একটি রেজোলিউশন পাস হয়। এতে রিপাবলিকান দলের চারজন সিনেটর ট্রাম্পের বিপক্ষে ভোট দেন। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিই প্রথমবারের মতো রিপাবলিকান সিনেটরদের প্রকাশ্য বিরোধিতা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ওবামার এই বক্তব্য ডেমোক্র্যাটদের সংগঠিত করতে এবং আগামী নির্বাচনে দলকে ঐক্যবদ্ধ করার কৌশলের অংশ। তাঁর ভাষণ ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষকেও প্রতিফলিত করে। তবে ট্রাম্পের সমর্থকরা ওবামার বক্তব্যকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করছেন।
(সূত্র: রয়টার্স)