খেলাধূলা ডেস্ক:
ভারত নারী ক্রিকেট দল ২০২৫ নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। গতকাল (রোববার) মুম্বাইয়ের ডিওয়াই পাটিল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫২ রানে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছে ভারত। বিশ্বকাপ জয়ী দলের অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌরের নেতৃত্বে ভারত এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে পৌঁছেছে, এবং পুরস্কার হিসেবে বিপুল পরিমাণ অর্থ লাভ করেছে।
আইসিসি (আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল) এই আসরে পুরস্কারের অর্থ বরাদ্দে বড় ধরনের পরিবর্তন আনায় নারী ক্রিকেটের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিতে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। এবারের বিশ্বকাপের পুরস্কার তহবিল ছিল ১৩.৮৮ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৫৩ কোটি টাকা), যা ২০২২ সালের নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের তুলনায় প্রায় চার গুণ বেশি। আরও বিস্ময়কর তথ্য হলো, এই পুরস্কার অর্থ ২০২৩ সালে পুরুষদের ওয়ানডে বিশ্বকাপের পুরস্কারের পরিমাণ থেকেও বেশি, যেখানে পুরুষদের পুরস্কার ছিল ১০ মিলিয়ন ডলার।
ভারতের প্রাপ্তি ও পুরস্কারের পরিমাণ
ফাইনালে বিজয়ী ভারত মোট ৪৪ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার পুরস্কার পেয়েছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫৫ কোটি টাকা। ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়া নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতে মাত্র ১.৩২ মিলিয়ন ডলার পেয়েছিল। এবার ভারতের পুরস্কারের পরিমাণ সেবারের তুলনায় প্রায় ২৩৯ শতাংশ বেড়েছে। উল্লেখযোগ্য যে, ২০২৩ সালের পুরুষদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারতীয় উপমহাদেশে অস্ট্রেলিয়া শিরোপা জিতে ৪ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার পেয়েছিল, যা নারীদের বিশ্বকাপের পরিমাণের তুলনায় অনেক কম ছিল।
দক্ষিণ আফ্রিকার পুরস্কার
ফাইনালে রানার্স-আপ দক্ষিণ আফ্রিকা পেয়েছে ২২ লাখ ৪০ হাজার ডলার পুরস্কার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৫ কোটি টাকা। সেমিফাইনালে হেরে যাওয়া দুই দল—নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড—প্রত্যেকটি পাবে ১.১২ মিলিয়ন ডলার করে পুরস্কার। এছাড়া, পঞ্চম এবং ষষ্ঠ স্থানে থাকা দলগুলো ৭ লাখ ডলার করে এবং সপ্তম ও অষ্টম স্থানে থাকা দলগুলো ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার করে পুরস্কৃত হবে।
বাংলাদেশের পুরস্কার
বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল এবারের টুর্নামেন্টে লিগ পর্বে ৩ পয়েন্ট সংগ্রহ করে সপ্তম অবস্থানে ছিল। তাই তারা পাচ্ছে ২.৮০ লাখ ডলার। এছাড়া, পাকিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র জয় লাভের জন্য বাংলাদেশ ৩৪ হাজার ৩১৪ মার্কিন ডলার পাবে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের পুরস্কার পরিমাণ ৫ লাখ ৬৪ হাজার ৩১৪ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬ কোটি ৯০ লাখ ২৭ হাজার টাকা।
পুরস্কারের কাঠামো ও প্রভাব
এই বিশ্বকাপে পুরস্কারের অর্থ বৃদ্ধির পেছনে আইসিসির ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এর মাধ্যমে নারী ক্রিকেটে বিনিয়োগ এবং প্রতিযোগিতার মানোন্নয়ন করা সম্ভব হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। পুরস্কারের পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে নারী ক্রিকেটে আরও বেশি প্রতিভাবান খেলোয়াড় উঠে আসতে পারে এবং এর ফলে দেশগুলোতে নারী ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ আরও বাড়বে।
এছাড়া, এই পুরস্কার কাঠামো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সমতা এবং মূল্যায়নের দিক থেকে একটি মাইলফলক হয়ে উঠবে। বিশেষত, দেশের জন্য একটি শক্তিশালী ক্রিকেট কাঠামো গড়ার ক্ষেত্রে এই ধরনের পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
উপসংহার
ভারত নারী ক্রিকেট দলের শিরোপা জয় এবং পুরস্কারের এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ক্রিকেট বিশ্বে নারী খেলোয়াড়দের প্রতি সম্মান এবং স্বীকৃতির নতুন এক অধ্যায় সূচনা করেছে। নারীদের ক্রিকেটের এই বৃদ্ধি ভবিষ্যতে আরও উন্নতি এবং সমৃদ্ধি আনতে সহায়তা করবে, যা কেবল ভারত বা দক্ষিণ আফ্রিকাই নয়, সারা বিশ্বের ক্রিকেট মহলকেই প্রভাবিত করবে।