আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় মাজার-ই-শরীফ শহরে শক্তিশালী ভূমিকম্পে অন্তত ৭ জন নিহত এবং ১৫০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। সোমবার (৩ নভেম্বর) স্থানীয় সময় মধ্যরাতে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার এ ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে অঞ্চলটি।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ভূমিকম্পের পরও উদ্ধার অভিযান চলছে এবং নিহত ও আহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৫৯ মিনিটে ভূমিকম্পটি মাটির প্রায় ২৮ কিলোমিটার গভীরে উৎপন্ন হয়।
রাজধানী কাবুল থেকেও ভূমিকম্পের কম্পন অনুভূত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বার্তাসংস্থা এএফপির প্রতিনিধি। তিনি জানান, মাজার-ই-শরীফের বাসিন্দারা মাঝরাতে ঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তায় আশ্রয় নেন। অনেকেই আশঙ্কা করছিলেন, ভূমিকম্পের অভিঘাতে ভবন ধসে পড়তে পারে।
মাত্র দুই মাস আগে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে এক বিধ্বংসী ভূমিকম্পে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। চলতি বছরই দেশটি একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়ছে।
২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর আফগানিস্তান বারবার ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হচ্ছে। ২০২৩ সালে হেরাত প্রদেশে আঘাত হানা এক ভূমিকম্পে দেড় হাজার মানুষ প্রাণ হারান এবং প্রায় ৬৩ হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়।
এর পর এ বছরের ৩১ আগস্ট ৬ মাত্রার এক অগভীর ভূমিকম্পে ২ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হন, যা আফগানিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প হিসেবে বিবেচিত হয়।
ভূতাত্ত্বিকভাবে আফগানিস্তান অত্যন্ত ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। বিশেষ করে হিন্দুক কুষের পার্বত্য অঞ্চল দিয়ে ইউরেশিয়ান ও ভারতীয় টেকটোনিক প্লেট মিলিত হওয়ায় এই এলাকায় ঘন ঘন ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটে।
দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ জানিয়েছে, সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে বেশ কয়েকটি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উদ্ধারকর্মীরা ধসে পড়া ঘরবাড়ির ভেতরে আটকে পড়া লোকজনকে উদ্ধারে কাজ করছে। স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সহায়তা পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অবকাঠামোগত দুর্বলতা ও নির্মাণ মানের ঘাটতির কারণে আফগানিস্তানে সামান্য মাত্রার ভূমিকম্পও ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি ডেকে আনে। এছাড়া দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক সংকট, সীমিত আন্তর্জাতিক সহায়তা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশটির দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করছে।
স্থানীয় প্রশাসন জনগণকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে এবং আফটারশক বা পরাঘাতের আশঙ্কায় সতর্ক থাকতে বলেছে।