আন্তর্জাতিক ডেস্ক
রাশিয়া ও চীন গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালাচ্ছে বলে দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও দেশ দুটি প্রকাশ্যে এমন কোনো কর্মকাণ্ডের স্বীকারোক্তি দেয়নি।
রোববার (৩ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের সিএবিএস নিউজের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ৬০ মিনিটস-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প এই মন্তব্য করেন। সাক্ষাৎকারটি সোমবার টিআরটি ওয়ার্ল্ডসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “রাশিয়া পরীক্ষা চালাচ্ছে, চীনও চালাচ্ছে— কিন্তু তারা এসব নিয়ে কিছু বলে না।” উপস্থাপিকা নোরা ও’ডনেল তাকে বলেন, বর্তমানে কেবল উত্তর কোরিয়াই পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করছে। জবাবে ট্রাম্প দাবি করেন, “অন্য দেশগুলোও গোপনে তা করছে, শুধু যুক্তরাষ্ট্রই প্রকাশ্যে এমন পরীক্ষা চালায় না।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করে তা পরীক্ষা না করা বাস্তবসম্মত নয়। তার ভাষায়, “আপনি অস্ত্র বানালেন, কিন্তু পরীক্ষা করলেন না— তাহলে জানবেন কীভাবে এটি কার্যকর কিনা?”
ট্রাম্প সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের হাতে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার রয়েছে। তিনি বলেন, “আমাদের কাছে এমন পরিমাণ পারমাণবিক শক্তি আছে, যা পৃথিবীকে ১৫০ বার উড়িয়ে দেওয়ার মতো। রাশিয়া দ্বিতীয় স্থানে, আর চীন অনেক পিছিয়ে আছে। তবে পাঁচ বছরের মধ্যে তারা সমান পর্যায়ে পৌঁছে যেতে পারে।”
ট্রাম্প আরও জানান, তিনি চান না যে যুক্তরাষ্ট্র একমাত্র দেশ হয়ে থাকুক যারা পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় না। তার ভাষায়, “অন্য দেশগুলো যখন গোপনে পরীক্ষা চালাচ্ছে, তখন আমরাও সেই সক্ষমতা বজায় রাখব। আমি চাই না, যুক্তরাষ্ট্র দুর্বল অবস্থানে থাকুক।”
সম্প্রতি ৩০ বছরের বেশি সময় পর আবারও পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দেন ট্রাম্প। তার এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে রাশিয়া, চীন ও উত্তর কোরিয়াকে কেন্দ্র করে নতুন করে পারমাণবিক প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯২ সালের পর থেকে কোনো পূর্ণমাত্রার পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালায়নি। দেশটি আংশিকভাবে পারমাণবিক পরীক্ষা নিষিদ্ধ চুক্তির (CTBT) পক্ষে থাকলেও আনুষ্ঠানিকভাবে তা অনুমোদন করেনি। অন্যদিকে রাশিয়া ও চীনও চুক্তিটিতে স্বাক্ষর করলেও তারা এ সংক্রান্ত কার্যক্রম গোপনে চালাচ্ছে বলে দাবি করেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের এই মন্তব্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, তার এ ধরনের বক্তব্য বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন করে পারমাণবিক উত্তেজনা বাড়াতে পারে। রাশিয়া ও চীন অতীতে একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা জানিয়েছে, নিজেদের পারমাণবিক কর্মসূচি আন্তর্জাতিক আইন ও নিরাপত্তা কাঠামোর মধ্যেই পরিচালিত হচ্ছে।
মার্কিন প্রশাসনের অভ্যন্তরেও ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। কিছু নীতি বিশ্লেষকের মতে, গোপন পারমাণবিক কার্যক্রমের প্রমাণ ছাড়াই এ ধরনের দাবি যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক অবস্থানকে জটিল করে তুলতে পারে।
বিশ্বের প্রধান পরাশক্তিগুলোর মধ্যে চলমান পারমাণবিক প্রতিযোগিতা ও অবিশ্বাসের প্রেক্ষাপটে ট্রাম্পের এই বক্তব্য নতুন প্রশ্ন তুলেছে, ভবিষ্যতে বৈশ্বিক নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া আরও কঠিন হয়ে পড়বে কিনা।