সারাদেশ ডেস্ক
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা সদস্যের পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। সঙ্ঘবদ্ধ ডাকাতদল প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে তাণ্ডব চালিয়ে স্বর্ণালঙ্কার, নগদ অর্থ ও মোবাইলফোনসহ প্রায় ৫৪ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
রোববার (২ নভেম্বর) গভীর রাতে উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের বালুয়াকান্দি দক্ষিণপাড়া এলাকায় অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ফজলুল হকের বাড়িতে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে জানা যায়, রাত আনুমানিক ৩টার দিকে জানালার গ্রিল কেটে প্রথমে দুই ডাকাত বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। পরে আরও ২০ থেকে ২৫ জনের একটি দল ওই ভবনের চারটি ফ্ল্যাটে একযোগে হামলা চালায়। এ সময় তারা পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ঘরে থাকা নগদ অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার ও মোবাইলফোন লুট করে।
ফজলুল হকের মেয়ে সাথী বেগম জানান, “রাত ১টার দিকে শব্দ শুনে ঘুম ভাঙে, কিন্তু বিষয়টি গুরুত্ব দিইনি। রাত ৩টার দিকে তাহাজ্জুতের নামাজ পড়তে গিয়ে দেখি জানালার গ্রিল কেটে দুই যুবক ঘরে ঢুকছে। তারা আমাকে ও আমার ছেলেকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। এরপর আরও ডাকাত ঢুকে একের পর এক ফ্ল্যাটে লুটপাট চালায়।”
তিনি আরও বলেন, “প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে চলে এই তাণ্ডব। তারা নগদ প্রায় ৩ লাখ টাকা, ৩২ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও ৯টি মোবাইল সেট নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় সবাইকে একটি রুমে আটকে বাইরে থেকে তালা মেরে পালিয়ে যায়।”
ফজলুল হকের ছেলে সাবিদ বলেন, “প্রথমে দুইজন জানালা কেটে ঢোকে, পরে প্রায় ২২–২৩ জন বাসায় প্রবেশ করে। বাইরে আরও কয়েকজন পাহারায় ছিল। তাদের মুখে মাস্ক ও গামছা ছিল। তারা আমাকে দিয়ে অন্য ফ্ল্যাটগুলোর দরজা খোলায়। আমার চোখের সামনে সব কিছু লুট করে নেয়।”
অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ফজলুল হক বলেন, “আমার তিন ছেলে দেশের বাইরে থাকে। তাদের পাঠানো ৩২ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, সম্প্রতি ব্যাংক থেকে তোলা নগদ ৩ লাখ টাকা ও ৯টি মোবাইল সেট নিয়ে যায় ডাকাতরা। তারা আমাদের পারিবারিক তথ্য জানত—কোন রুমে কী আছে, কখন ব্যাংক থেকে টাকা তোলা হয়েছে, এমনকি বাসার ওয়াইফাই বন্ধ থাকার কথাও জানত। এতে স্থানীয় কেউ জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছি।” তিনি জানান, ঘটনার বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
প্রতিবেশী লাক মিয়া জানান, “ভোর ৫টার দিকে আমরা বিষয়টি টের পাই। পরে তালাবদ্ধ রুম থেকে তাদের উদ্ধার করি। তখন ডাকাতরা নির্বিঘ্নে এলাকা ত্যাগ করে।”
গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, “সকাল ৬টার দিকে ৯৯৯ থেকে কল পেয়ে ঘটনাটি জানতে পারি। খবর পাওয়ার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে, দোষীদের শনাক্তে অভিযান চলছে।”
পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে এটি একটি পরিকল্পিত ডাকাতি বলে মনে হচ্ছে। তবে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত ও লুট হওয়া মালামাল উদ্ধারে তৎপরতা চলছে।