আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
সুদানের দারফুর অঞ্চলের আল-ফাশার শহরে প্যারামিলিটারি বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) সহিংস কর্মকাণ্ডে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। শহরটি দখলের পর আরএসএফ সদস্যরা ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ, নারী নির্যাতন ও লুটপাট চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদন এই ভয়াবহতার চিত্র প্রকাশ করেছে।
আলজাজিরার কাছে এক নারী জানিয়েছেন, আরএসএফ বাহিনী আল-ফাশার শহরে প্রবেশ করার পর নিজের দুই ছেলেকে খুঁজতে বের হলে তিনি যৌন নিপীড়নের শিকার হন। বর্তমানে তিনি সুদানের উত্তরাঞ্চলের আল দাব্বাহ শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন।
নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নারী বলেন, “আরএসএফ সেনারা যখন সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর দখল করে, তখন আমি মেয়েদের ঘরে রেখে ছেলেদের খুঁজতে বের হই। পথে আরএসএফ সদস্যরা আমাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং এক বাড়িতে নিয়ে গিয়ে যৌন নিপীড়ন চালায়। আমি তাদের বলেছিলাম আমি তাদের মায়ের বয়সী, কিন্তু তারা থামেনি—আমি শুধু কেঁদেছি।”
ওই নারী আরও জানান, যেসব ছেলেদের খুঁজতে গিয়ে তিনি ধর্ষণের শিকার হন, তাদের তিনি আর খুঁজে পাননি। “নিপীড়নের পর তারা আমাকে ছেড়ে দেয়। আমি মেয়েদের নিয়ে পালিয়ে যাই, কিন্তু ছেলেরা কোথায় আছে জানি না।”
তিনি বলেন, “আরএসএফের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা পার হওয়ার পথে আমরা অসংখ্য মরদেহ দেখতে পেয়েছি। শেষে আল-ফাশারের বাইরে একটি ছোট গ্রামে গিয়ে পৌঁছাই।”
দারফুরের আল-ফাশারে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা এবং অসংখ্য নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে আরএসএফ বাহিনীর বিরুদ্ধে। স্থানীয় বাসিন্দা ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, শহর দখলের পর আরএসএফ সদস্যরা নির্বিচারে বেসামরিক মানুষদের ওপর হামলা চালিয়েছে।
আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, আরএসএফ বাহিনী দারফুরে সেনাবাহিনীর অবস্থান নিয়ন্ত্রণে নিতে ব্যাপক সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে। শহরের হাসপাতাল, ঘরবাড়ি ও বেসামরিক স্থাপনায় হামলার ফলে মানবিক সংকট আরও গভীর হয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, চলমান সংঘাতে দারফুর অঞ্চল থেকে ইতোমধ্যে লাখো মানুষ গৃহহারা হয়েছেন। সহিংসতা থেকে বাঁচতে তারা পার্শ্ববর্তী রাজ্য ও প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিচ্ছেন। নারী ও শিশুদের মধ্যে মানসিক আঘাত ও স্বাস্থ্যঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে, যাতে বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় এবং যুদ্ধাপরাধে জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনা হয়।
সূত্র: আলজাজিরা