অর্থনীতি ডেস্ক
এক টাকার নিচে নেমে যাওয়া শেয়ারের জন্য নতুনভাবে সর্বনিম্ন মূল্য পরিবর্তন বা ‘টিক সাইজ’ নির্ধারণ করায় দেশের পুঁজিবাজারে সোমবার (৩ নভেম্বর) দুইটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দরপতন ঘটে। কোম্পানি দুটি হলো প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেড এবং ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। নতুন নিয়মের ফলে দিনের শুরুতেই উভয় প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর সার্কিট ব্রেকার সীমা অতিক্রম করে পড়ে যায়।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী প্রতিদিন শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ বা সর্বনিম্ন ১০ শতাংশের বেশি পরিবর্তন হতে পারে না। কিন্তু সোমবার দুই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর ১০ শতাংশের বেশি কমে যায়, যা সার্কিট ব্রেকারের সীমা ভেঙে দেয়।
রোববার (২ নভেম্বর) লেনদেন শেষে প্রিমিয়ার লিজিংয়ের শেয়ারদর ছিল ১ টাকা ৩ পয়সা। নতুন নিয়ম অনুযায়ী ‘রাউন্ড ফিগার’ সমন্বয় করে সোমবার দিনের শুরুতে শেয়ারটির দাম দাঁড়ায় ১ টাকা। তবে লেনদেন শুরু হতেই এর দাম ১২ দশমিক ৬২ শতাংশ বা ১৩ পয়সা কমে দাঁড়ায় ৯০ পয়সায়।
একইভাবে, ফারইস্ট ফাইন্যান্সের শেয়ারদর রোববার ছিল ১ টাকা ১ পয়সা। সমন্বয়ের পর সোমবার এটি ১ টাকায় নামানো হয়। তবে লেনদেন শুরু হতেই শেয়ারটির দাম ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ বা ১১ পয়সা কমে ৯০ পয়সায় নেমে আসে।
সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এক টাকার নিচে নেমে যাওয়া শেয়ারগুলোর জন্য নতুন ‘টিক সাইজ’ বা সর্বনিম্ন দর পরিবর্তন নির্ধারণ করে। এর মাধ্যমে ১ টাকার নিচে থাকা শেয়ারের দাম প্রতি লেনদেনে ১ পয়সা বাড়তে বা কমতে পারবে। তবে ১ টাকার উপরে উঠলে আগের নিয়ম অনুযায়ী সর্বনিম্ন পরিবর্তন হবে ১০ পয়সা।
নতুন এই নিয়ম ২৯ অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়েছে। এর আগে, ১৬ অক্টোবর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর কাছে চিঠি পাঠিয়ে নিয়ম চালুর অনুমোদন চায় ডিএসই।
ডিএসইর ব্যাখ্যা অনুযায়ী, শেয়ারদর ১ টাকার নিচে নেমে গেলে বিদ্যমান টিক সাইজ (১০ পয়সা) অনুযায়ী দর পরিবর্তনের সুযোগ থাকত না। কারণ, ৯০ পয়সা দামের শেয়ারের ১০ শতাংশ পরিবর্তন মানে ৯ পয়সা, কিন্তু টিক সাইজ ছিল ১০ পয়সা। ফলে শেয়ারদর না ৯ পয়সা বাড়ানো, না ৯ পয়সা কমানো সম্ভব হতো। এতে শেয়ারদর কার্যত ‘ফ্রিজ’ হয়ে থাকত এবং লেনদেন স্থবির হয়ে পড়ত।
এই সমস্যার সমাধান হিসেবে ডিএসই নতুন টিক সাইজ নির্ধারণ করে জানায়, এক টাকার নিচে থাকা শেয়ার এখন ৮৯, ৮৮, ৮৭, ৮৬, ৮৫ পয়সা—এ ধরনের সূক্ষ্ম দরে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে।
নতুন নিয়ম কার্যকর হওয়ার প্রথম দিনেই বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে প্রিমিয়ার লিজিং ও ফারইস্ট ফাইন্যান্সের দর সমন্বয় পরবর্তী দ্রুত পতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এক টাকার নিচে থাকা শেয়ারের টিক সাইজ পরিবর্তন লেনদেনের স্থবিরতা কাটাতে সহায়ক হলেও প্রাথমিকভাবে দর সমন্বয়ের কারণে কিছু কোম্পানির শেয়ারদর অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করতে পারে।
তবে তারা আশা প্রকাশ করেন, বাজার নতুন নিয়মে অভ্যস্ত হলে এই পরিবর্তন নিম্নমূল্যের শেয়ারগুলোর তরলতা বাড়াবে এবং লেনদেনের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনবে।