আন্তর্জাতিক ডেস্ক
চীন যদি তাইওয়ানে সামরিক অভিযান চালায়, তার পরিণতি সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং ভালোভাবেই জানেন—এমন মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তিনি স্পষ্টভাবে জানাননি, আক্রমণ হলে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের প্রতিরক্ষায় এগিয়ে আসবে কি না।
রবিবার (২ নভেম্বর) সম্প্রচারিত যুক্তরাষ্ট্রের সিবিএস নিউজের ‘৬০ মিনিটস’ অনুষ্ঠানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “এমন কিছু ঘটলে আপনি জানতে পারবেন। আর তিনি (শি চিনপিং) জানেন এর উত্তর কী।” তবে ট্রাম্প এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাতে অস্বীকৃতি জানান।
ছয় বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো গত বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই বৈঠক সম্পর্কে ট্রাম্প বলেন, “তাইওয়ান ইস্যুটি কখনো আলোচনায় আসেনি।”
পরদিন শুক্রবার ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো রিসোর্টে দেওয়া আরেক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “আমি আমার গোপন পরিকল্পনা প্রকাশ করতে পারি না। তবে অন্য পক্ষ তা জানে।” তিনি দাবি করেন, “শি চিনপিং ও তার ঘনিষ্ঠরা প্রকাশ্যে বলেছেন—ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তারা কোনো পদক্ষেপ নেবেন না, কারণ তারা জানেন এর পরিণতি কী হতে পারে।”
চীন স্বশাসিত তাইওয়ানকে তাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দাবি করে আসছে। বেইজিংয়ের “এক চীন নীতি” অনুসারে যুক্তরাষ্ট্র শুধু চীন সরকারকেই স্বীকৃতি দেয়, তবে তাইওয়ানের আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্র বিক্রি করে আসছে। এই নীতির ফলে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই কূটনৈতিক টানাপোড়েন চলছে।
তাইওয়ান প্রণালীকে ঘিরে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের সামরিক মহড়া এবং মার্কিন নৌবাহিনীর উপস্থিতি দুই দেশের সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের মন্তব্য এই উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে নতুন কূটনৈতিক ইঙ্গিত তৈরি করেছে।
এএফপি জানায়, ট্রাম্প ও শি চিনপিংয়ের বৈঠকে মূল আলোচ্য ছিল দুই দেশের চলমান বাণিজ্য সম্পর্ক। দুই পক্ষই অর্থনৈতিক সহযোগিতা পুনরুজ্জীবিত করা এবং বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাব কমানোর বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে। তাইওয়ান ইস্যুটি সচেতনভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তাইওয়ান ইস্যু এখন যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের অন্যতম সংবেদনশীল বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের মন্তব্য শি চিনপিংয়ের প্রতি এক ধরনের কূটনৈতিক বার্তা—যে, চীন যদি তাইওয়ান আক্রমণ করে, তবে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া গুরুতর হতে পারে।
অন্যদিকে চীন বারবার বলেছে, তারা “জাতীয় ঐক্য” রক্ষায় প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ থেকেও পিছপা হবে না। এ অবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে, যা তাইওয়ান প্রণালীর স্থিতিশীলতার জন্য উদ্বেগের কারণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।