নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মদনপুর এলাকায় এক গার্মেন্টস শ্রমিকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সহকর্মী শ্রমিকরা সোমবার (৩ নভেম্বর) সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। প্রায় কয়েক ঘণ্টা চলা এ বিক্ষোভে মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়, ফলে সাধারণ যাত্রী ও যানবাহন চলাচলে চরম ভোগান্তি দেখা দেয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহত শ্রমিকের নাম রিনা (৩০)। তিনি কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানার দুলালের মেয়ে এবং মদনপুর ইউনিয়নের লারিজ ফ্যাশন নামে একটি পোশাক কারখানায় কর্মরত ছিলেন। রোববার রাতে কাজের সময় তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় তিনি বিশ্রামের জন্য ছুটি চাইলেও কর্তৃপক্ষ তা অনুমোদন করেনি বলে অভিযোগ করেন সহকর্মীরা।
সহকর্মী আসমার বরাত দিয়ে জানা যায়, অসুস্থতার পর কিছুক্ষণ কাজ চালিয়ে যেতে বাধ্য হন রিনা। পরে মাথা ঘুরে তিনি মেঝেতে পড়ে যান। তখন তাকে দ্রুত স্থানীয় ঈদগাঁ হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চিকিৎসকরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান, যেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে তার মৃত্যু হয়।
রিনার মৃত্যুর খবর কারখানায় পৌঁছালে সোমবার সকালে সহকর্মী শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে কারখানার সামনে ও মহাসড়কে অবস্থান নেন। তারা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মদনপুর এলাকা থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়।
ঘটনার পর খবর পেয়ে কাঁচপুর থানা ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে যায়। কাঁচপুর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল কাদের জিলানী জানান, বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করেছিল। পুলিশ তাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়।
নারায়ণগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের পরিদর্শক (ইনচার্জ) সেলিম বাদশা বলেন, লারিজ ফ্যাশনের শ্রমিক রিনা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এ ঘটনার পর তার সহকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে বিক্ষোভে নামে। তিনি আরও জানান, শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা শেষে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়েছে এবং বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে কারখানা কর্তৃপক্ষকেও শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি প্রতিরোধে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনায় এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা জানান, হঠাৎ সড়ক অবরোধে বহু সময় ধরে যানবাহন আটকা পড়ে থাকে, যা জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি করে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।