জেলা প্রতিনিধি
জয়পুরহাট,
অসময়ের টানা বৃষ্টিতে জয়পুরহাট জেলাজুড়ে আমন ধান, আগাম আলু, পেঁয়াজ ও শাকসবজির উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে। তিন দিন ধরে বিরতিহীন বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়ার কারণে মাঠের পাকা ও আধাপাকা ধানগাছ নুয়ে পড়েছে, পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আগাম আলু ও পেঁয়াজের খেত। এতে জেলার হাজারো কৃষক চরম বিপাকে পড়েছেন।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষকেরা জানিয়েছেন, মাঠে আমন ধান পাকতে শুরু করেছিল এবং অনেকেই ধান কাটা শুরু করেছিলেন। কেউ কেউ ধান কেটে জমি প্রস্তুত করে আগাম আলু রোপণ করছিলেন। পাশাপাশি বিভিন্ন শাকসবজিরও চাষ শুরু হয়। তবে হঠাৎ শুরু হওয়া বৃষ্টিতে এসব ফসলের বড় অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবহাওয়া দ্রুত অনুকূলে না ফিরলে আমন ধান ও আগাম আলু উভয় ফসলেই বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা রয়েছে। কৃষকেরা মনে করছেন, এর প্রভাব জেলার সামগ্রিক কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতেও পড়তে পারে।
জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালকের কার্যালয় থেকে পাওয়া সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, জেলাজুড়ে ৪৬৯ দশমিক ৫ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে রোপা আমন ধান ৩৩৭ হেক্টর, শাকসবজি ২৭ হেক্টর, পেঁয়াজ (কন্দ) ১৩ হেক্টর, মরিচ ৭ দশমিক ৫ হেক্টর এবং আগাম আলু ৮৫ হেক্টর জমিতে ক্ষতি হয়েছে। সদর উপজেলায় রোপা আমন ধান, শাকসবজি, পেঁয়াজ ও মরিচের বেশি ক্ষতি হয়েছে, আর আগাম আলুর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আক্কেলপুর উপজেলায়।
জেলার বিভিন্ন ফসলি মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, অসময়ের বৃষ্টিতে অধিকাংশ জমির পাকা ও আধাপাকা ধানগাছ হেলে পড়েছে। অনেক কৃষক বাধ্য হয়ে আগেভাগেই আধাপাকা ধান কাটতে শুরু করেছেন। অন্যদিকে আলু ও পেঁয়াজের খেতে পানি জমে বীজ পচে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে কৃষকেরা রোপণ করা বীজ তুলতে বাধ্য হচ্ছেন।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার ধারকি গ্রামের কৃষক আব্দুল বাকি জানান, তিনি ৪৫ হাজার টাকা ব্যয়ে দুই বিঘা জমিতে স্টিক ও ক্যারেজ জাতের আলু বীজ রোপণ করেছিলেন। কিন্তু অসময়ের বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে বীজ পচে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তাই ক্ষতির আশঙ্কায় তিনি বীজ তুলে নিচ্ছেন।
একই এলাকার কৃষক মশিউর রহমান বলেন, দুই বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ করেছেন। ধান পাকলেও বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে গাছ হেলে পড়েছে। তিনি বলেন, “কয়েক দিনের মধ্যে ধান কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, কিন্তু এখন যদি দ্রুত পানি না সরে, পুরো ফসল নষ্ট হয়ে যাবে।”
ক্ষেতলাল উপজেলার মিনিগাড়ী গ্রামের কৃষক হাফিজার বলেন, দেড় বিঘা জমিতে আগাম আলু রোপণ করেছিলেন। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে পুরো জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “যদি দ্রুত রোদ না ওঠে, একটি গাছও আর বাঁচবে না।”
আক্কেলপুর উপজেলার আওয়ালগাড়ী এলাকার কৃষক সাইফুল ইসলাম জানান, “কয়েকদিন ধরে আগাম জাতের আলু রোপণ করেছি। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টিতে সব ঢুবে গেছে। বছরের এই সময়ে এমন বৃষ্টি আগে কখনও দেখিনি। পেঁয়াজ ও রসুন বীজও রোপণ করেছিলাম, সেগুলোও নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”
জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ডিডি) এ.কে.এম. সাদিকুল ইসলাম জানান, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে রোববার পর্যন্ত তিন দিনে জেলায় মোট ৮৮ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি বলেন, “এই সময়ে ঝড়-বৃষ্টির কারণে জেলায় রোপা আমন ধান, আগাম আলু, পেঁয়াজ, মরিচ ও শাকসবজির ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে মাঠপর্যায়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, যদি আবহাওয়া দ্রুত অনুকূলে না আসে, তবে ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে পুনরায় চাষাবাদের সক্ষমতা কমে যাবে। এতে জেলার মৌসুমি কৃষি উৎপাদন ও বাজারে খাদ্যপণ্যের সরবরাহে প্রভাব পড়তে পারে।