অর্থনীতি ডেস্ক
গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রথম বছরে বাংলাদেশে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর সাধারণত বিদেশি বিনিয়োগ কমে গেলেও বাংলাদেশে এ প্রবৃদ্ধি দেশটির অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থার ইঙ্গিত বহন করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৪৮৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। পরের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৬৭০ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৩ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ হয় ৯২৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, যদিও ২০২৪ সালে কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৬৭৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারে। তবে ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসেই এ বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯২ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে, যা গত বছরের তুলনায় ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ বেশি।
বিশ্বব্যাংকের বিশ্লেষণ অনুসারে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যেসব দেশে গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে, সেসব দেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বৈদেশিক বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালের পর এফডিআই কমেছে ১৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ, চিলিতে ২০১৯ সালের পর কমেছে ১৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ, সুদানে ২০২১ সালের পর ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ, ইউক্রেনে ২০১৪ সালের পর ৮১ দশমিক ২১ শতাংশ, মিশরে ২০১১ সালের পর ১০৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ায় ১৯৯৮ সালের পর ১৫১ দশমিক ৪৯ শতাংশ কমেছে। এই বৈশ্বিক প্রবণতার বিপরীতে বাংলাদেশের বিনিয়োগ বৃদ্ধির ধারা আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে বিশেষ নজর কেড়েছে।
বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক রূপান্তরের পরেও বাংলাদেশ অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখার অনন্য সক্ষমতা দেখিয়েছে। তিনি জানান, “গণঅভ্যুত্থানের পর সাধারণত বিদেশি বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমরা উল্টো প্রবণতা দেখছি। এটি সম্ভব হয়েছে সঠিক নীতি নির্ধারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সমন্বিত প্রচেষ্টা, এবং বেসরকারি খাতের উদ্যোগের কারণে।” তিনি আরও জানান, “বিডা বিনিয়োগকারীদের সহায়তা করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে এবং শিগগিরই পুরো বছরের একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।”
অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে এই প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক সংকেত। তারা মনে করছেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, নীতি সহায়তা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারবে।
বিশ্লেষকরা আরও উল্লেখ করেন, বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির ফলে দেশে কর্মসংস্থান, প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং রপ্তানি আয়ের সুযোগ বাড়বে। পাশাপাশি উৎপাদন খাতে বিদেশি অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় শিল্পে প্রতিযোগিতা ও দক্ষতা উন্নয়নের সম্ভাবনাও তৈরি হবে।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক এফডিআই প্রবৃদ্ধিকে তারা আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক আস্থার প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, এ প্রবণতা টেকসই রাখতে হলে প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সহজীকরণ, করনীতিতে স্থিতিশীলতা এবং বিনিয়োগ সংক্রান্ত অবকাঠামো উন্নয়ন অব্যাহত রাখা জরুরি।