আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সাবেক মিলিটারি অ্যাডভোকেট জেনারেল মেজর জেনারেল ইয়িফাত টোমার-ইরুশালমি গ্রেপ্তার হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ফিলিস্তিনি এক বন্দির ওপর নির্যাতনের একটি ভিডিও ফাঁস হয়েছে, যার সম্পূর্ণ দায় তিনি গ্রহণ করেছিলেন। এই ঘটনায় ইসরায়েলি রাজনৈতিক ও সামরিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনাটি নিয়ে তদন্তের অংশ হিসেবে ইয়িফাত টোমার-ইরুশালমি গত সপ্তাহে পদত্যাগ করেছিলেন। তবে রবিবার তাকে নিখোঁজ হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং পরবর্তীতে তেল আবিবের উত্তরের একটি সমুদ্রসৈকতে এক ঘণ্টাব্যাপী অভিযানের মাধ্যমে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ বছর আগস্টে একটি ইসরায়েলি টিভি চ্যানেলে সম্প্রচারিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, দক্ষিণ ইসরায়েলের সদে টাইমান সামরিক ঘাঁটিতে কয়েকজন রিজার্ভ সৈন্য এক ফিলিস্তিনি বন্দিকে মারধর ও অত্যাচার করছেন। বন্দিকে একপাশে নিয়ে গিয়ে তাকে দাঙ্গা দমনের ঢাল দিয়ে ঘিরে ফেলা হয় এবং এরপর ধারালো বস্তু দিয়ে তার শারীরিক নির্যাতন করা হয়।
ভিডিওটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর নজরে আসে এবং ব্যাপক প্রতিবাদের সৃষ্টি হয়। এর পর পাঁচজন রিজার্ভ সৈন্যের বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। তবে অভিযুক্ত সৈন্যরা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং তাদের পরিচয় এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
ভিডিওটি প্রকাশিত হওয়ার পর ইসরায়েলি সরকারের পক্ষ থেকে একটি আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু হয়। এর আগে, ভিডিওটি সামনে আসার পর, টোমার-ইরুশালমি পদত্যাগ করেছিলেন। তার পদত্যাগপত্রে তিনি এ ঘটনার পুরো দায় নিজের কাঁধে নেন। তিনি উল্লেখ করেন, “যদি কোনো উপকরণ আমার অধীনস্থ ইউনিট থেকে গণমাধ্যমে ফাঁস হয়ে থাকে, তাহলে এর জন্য আমি সম্পূর্ণ দায়ী।”
এই ঘটনার পর, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ ঘোষণা দেন যে, ইয়িফাত টোমার-ইরুশালমি আর তার পদে ফিরতে পারবেন না।
ফিলিস্তিনি ওই বন্দি, যাকে ভিডিওতে নির্যাতন করা হয়েছিল, তাকে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে গাজায় ফেরত পাঠানো হয়। তিনি ছিলেন সেই বন্দিদের একজন, যাদের ইসরায়েল হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের বিনিময়ে মুক্তি দিয়েছিল।
এই ভিডিও প্রকাশের পর, বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। তারা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে। আন্তর্জাতিক আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা এই ঘটনাকে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবাধিকার সনদ লঙ্ঘনের একটি নতুন উদাহরণ হিসেবে দেখছেন।
ফিলিস্তিনি অধিকার কর্মীরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বাহিনীর এই ধরনের আচরণ ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি দীর্ঘদিনের অবিচারের ধারাবাহিকতা। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
এই ঘটনা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও রাজনৈতিক চাপ তৈরি করেছে। বিশেষ করে, একটি দেশীয় নিরাপত্তা বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার পদত্যাগ এবং পরে তার গ্রেপ্তার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা এবং পরিচালনার ওপর বড় ধরনের প্রশ্ন তুলেছে। এ ঘটনা প্রমাণ করেছে যে ইসরায়েলি বাহিনীতে এখনও অনুশাসন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে বড় ধরনের সমস্যা রয়ে গেছে।
ইসরায়েলি সরকারের অভ্যন্তরীণ তীব্র বিরোধের মধ্যে এই ধরনের ঘটনা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে সেই দেশের যুদ্ধে জড়িত থাকা সময়ে যখন আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও তাদের অবস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এই ঘটনায় ভবিষ্যতে ইসরায়েলি বাহিনীর আচরণ এবং তাদের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতির ওপর গভীর প্রভাব পড়তে পারে।