আন্তর্জাতিক ডেস্ক
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরু আনুষ্ঠানিকভাবে মেক্সিকোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেটসি চাভেজকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সোমবার (৩ নভেম্বর) দেশটির সরকার ঘোষণা করেছে।
পেরুর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুগো দে জেল্লা লিমায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আজ আমরা বিস্ময় ও দুঃখের সঙ্গে জেনেছি যে সাবেক প্রেসিডেন্ট পেদ্রো কাস্তিলোর কথিত ষড়যন্ত্রকারী বেটসি চাভেজকে লিমায় অবস্থিত মেক্সিকো দূতাবাসের বাসভবনে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এই অবন্ধুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং মেক্সিকোর বর্তমান ও সাবেক প্রেসিডেন্টদের আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ধারাবাহিক হস্তক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে পেরু সরকার মেক্সিকোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
মেক্সিকোর পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য জানানো হয়নি। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত দুই দেশের মধ্যে ২০২২ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার পর সৃষ্ট উত্তেজনাকে আরও গভীর করতে পারে।
বেটসি চাভেজ ২০২২ সালের নভেম্বরে সাবেক প্রেসিডেন্ট পেদ্রো কাস্তিলোর সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রী থেকে পদোন্নতি পেয়ে প্রধানমন্ত্রী হন। সে সময় প্রেসিডেন্ট কাস্তিলো ও পার্লামেন্টের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব তীব্র আকার ধারণ করেছিল। পরের মাসেই কাস্তিলো সংসদ ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করলে কংগ্রেস তাকে অভিশংসন করে ক্ষমতাচ্যুত করে।
অভিশংসনের পর কাস্তিলো মেক্সিকোর দূতাবাসে আশ্রয় নিতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনী তাকে পথে গ্রেপ্তার করে। বিদ্রোহ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে তাকে আটক করা হয়। একই মামলায় বেটসি চাভেজের বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু হয়।
চাভেজের আইনজীবী রাউল নোব্লেসিলা স্থানীয় একটি রেডিও স্টেশনকে জানান, কয়েক দিন ধরে তিনি তার মক্কেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না এবং জানেন না তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে আশ্রয় চেয়েছেন কি না।
পেরু ও মেক্সিকোর মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয় কাস্তিলোর অভিশংসনের পরপরই। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে মেক্সিকো কাস্তিলোর স্ত্রী ও সন্তানদের রাজনৈতিক আশ্রয় দিলে পেরু সরকার মেক্সিকোর রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেছিল।
নতুন করে চাভেজকে আশ্রয় দেওয়ার ঘটনায় লিমা ও মেক্সিকো সিটির কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, এই পদক্ষেপ দুই দেশের রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পেরু সরকার ইতিমধ্যে মেক্সিকোতে নিযুক্ত নিজস্ব কূটনৈতিক কর্মকর্তাদের প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কাস্তিলো প্রশাসনের পতনের পর লাতিন আমেরিকার বামপন্থী ও ডানপন্থী শাসনব্যবস্থার মধ্যকার দ্বন্দ্ব আবারও নতুন রূপে সামনে এসেছে। পেরুর এই সিদ্ধান্ত আঞ্চলিক রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি করতে পারে বলেও তাদের আশঙ্কা।