আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রে ইতিহাসের দীর্ঘতম সরকারি অচলাবস্থার প্রভাবে দেশটির বিভিন্ন বিমানবন্দরে দেখা দিয়েছে তীব্র বিশৃঙ্খলা ও দুর্ভোগ। শাটডাউনের কারণে বেতন না পাওয়ায় বিপুলসংখ্যক বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা কাজে অনুপস্থিত থাকায় শত শত ফ্লাইট বাতিল ও হাজারো ফ্লাইট বিলম্বিত হচ্ছে।
ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) জানিয়েছে, সরকারি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তাদের ৩০টি বড় বিমানবন্দর নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের প্রায় অর্ধেকেই জনবল ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে নিউইয়র্ক অঞ্চলের বিমানবন্দরগুলোতে অনুপস্থিতির হার ৮০ শতাংশে পৌঁছেছে।
ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটঅ্যাওয়্যারের তথ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ১৬ হাজার ৭০০টির বেশি ফ্লাইট দেরিতে ছেড়েছে এবং ২ হাজার ২৮২টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। সোমবারও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। সেদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত শিকাগো ও’হেয়ার, ডালাস ফোর্ট ওয়ার্থ, ডেনভার ও নিউয়ার্কসহ বড় শহরগুলোর বিমানবন্দরে আরও ৪ হাজার ফ্লাইট দেরিতে ছাড়ে এবং ৬০০টির বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়।
এফএএ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সরকারের অচলাবস্থার কারণে বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রকদের অনুপস্থিতি দ্রুত বাড়ছে। সংস্থাটি বলেছে, “অচলাবস্থার অবসান না হলে বিমান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তারা বেতন পাবেন না এবং যাত্রীদের আরও বিলম্ব ও বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে। নিরাপত্তা রক্ষায় প্রয়োজনে বিমান চলাচলের সংখ্যা সীমিত করা হবে, যার ফলে ফ্লাইট বিলম্ব বা বাতিলও হতে পারে।”
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে প্রায় ১৩ হাজার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার বা বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক কর্মরত আছেন, যারা ‘অপরিহার্য কর্মী’ হিসেবে বেতন ছাড়াই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এফএএ জানিয়েছে, ক্রমবর্ধমান অনুপস্থিতির কারণে ফ্লাইটের নিরাপত্তা ঝুঁকি এড়াতে বিমান চলাচলের সংখ্যা কমানো ছাড়া বিকল্প নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহনমন্ত্রী শন ডাফি রবিবার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমরা ওভারটাইম কাজ করছি যাতে সিস্টেম নিরাপদ থাকে। প্রয়োজনে ফ্লাইট বাতিল বা বিলম্বিত হবে।” তিনি আরও জানান, কিছু বিমান নিয়ন্ত্রক জীবিকা নির্বাহের জন্য বিকল্প পেশায় কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন। ডাফি বলেন, “যখন কেউ পরিবারকে খাওয়ানোর জন্য দ্বিতীয় কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে, তখন আমি তাকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করব না।”
অচলাবস্থার কারণে ফেডারেল সরকারের বিপুলসংখ্যক কর্মচারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বর্তমানে অন্তত ৬ লাখ ৭০ হাজার বেসামরিক ফেডারেল কর্মী বাধ্যতামূলক ছুটিতে আছেন, আর প্রায় ৭ লাখ ৩০ হাজার কর্মী বেতন ছাড়াই দায়িত্ব পালন করছেন।
মঙ্গলবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি শাটডাউন বা অচলাবস্থা টানা ৩৫তম দিনে গড়িয়েছে। এর ফলে চলমান অচলাবস্থা ২০১৮–২০১৯ সালের অচলাবস্থার সমান দীর্ঘ হয়ে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সরকারি অচলাবস্থা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
অচলাবস্থার ফলে শুধু বিমান চলাচল নয়, ফেডারেল সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতেও কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহন খাতসহ সামগ্রিক অর্থনীতিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব আরও গভীর হতে পারে।