খেলাধুলা ডেস্ক
বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নানা অভিযোগ রয়েছে। এবার সে বিষয়ে নিজের হতাশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জ্যোতি লেখেন, সরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকেন এবং বেসরকারি ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশন করানোর রোগীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। তিনি আরও উল্লেখ করেন, বিভিন্ন পরীক্ষার ক্ষেত্রেও রোগীদের অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হয়। নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি লেখেন, “সরকারি হাসপাতালে জরুরি বিভাগে ডাক্তার নেই। প্রাইভেট সেন্টারে সিজার করবেন এমন রোগী বেশী প্রাধান্য পেয়ে থাকেন। টেস্ট করাতে গেলে আরও খুশি। চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে কিছু বলার নেই। আজ নিজের চোখে যা দেখলাম, বুঝলাম মনে হলো আল্লাহ কাউকে রোগ বালাই দিয়েন না। একদম সরাসরি মৃত্যু দিও।”
নিগার সুলতানা জ্যোতির এই পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই তাঁর অভিজ্ঞতার সঙ্গে একমত পোষণ করে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নের দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে, কিছু মন্তব্যে বলা হয়েছে যে, চিকিৎসা সেবায় জনবল ঘাটতি ও অব্যবস্থাপনা বহুদিনের সমস্যা, যা সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও পর্যাপ্ত বাজেট প্রয়োজন।
বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক সংকট ও সেবার মান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সাধারণ মানুষের অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে জরুরি বিভাগে চিকিৎসক অনুপস্থিতি, চিকিৎসা সরঞ্জামের স্বল্পতা, ও রোগীদের দীর্ঘ অপেক্ষার মতো সমস্যা প্রায়ই শোনা যায়। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, দেশের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক-পদে শূন্যতার হার ২০ শতাংশের বেশি, যা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে বড় বাধা সৃষ্টি করছে।
অন্যদিকে, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসার মান তুলনামূলক ভালো হলেও ব্যয়বহুল হওয়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের নাগালের বাইরে থেকে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বৈষম্যই সাধারণ মানুষের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বাড়াচ্ছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষে দেশে ফিরেছে। টুর্নামেন্টে সাত ম্যাচ খেলে একটিতে জয় পেয়েছে তারা, ফলে আট দলের মধ্যে সপ্তম স্থানে থেকে আসর শেষ করেছে। দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়মিত পারফর্ম করা এই অধিনায়কের ব্যক্তিগত এই অভিজ্ঞতা আবারও দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার চিত্র নতুন করে আলোচনায় এনেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের প্রকাশ্য প্রতিক্রিয়া সমাজে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়, যা কর্তৃপক্ষকে স্বাস্থ্যখাতে টেকসই পরিবর্তনের দিকে পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করতে পারে। দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার মানোন্নয়ন ও সবার জন্য সহজলভ্য চিকিৎসা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।