খেলাধুলা ডেস্ক
ভারতের কাছে হারের পর নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো কিংবদন্তি ক্রিকেটারের উপস্থিতি না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশটির জনপ্রিয় অভিনেত্রী, লেখক ও সঞ্চালক থানজা ভুর। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, এমন ঐতিহাসিক মঞ্চে প্রোটিয়া মেয়েদের পাশে সাবেক তারকা কিংবা ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির অনুপস্থিতি কি দেশের নারী ক্রিকেটারদের প্রতি উদাসীনতার প্রতিফলন নয়?
গত রোববার মুম্বাইয়ের ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারত ৫২ রানে পরাজিত করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে স্বাগতিক ভারতীয় দল নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২৯৮ রান তোলে, যা ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকা অলআউট হয় ২৪৬ রানে। লরা উলভার্টের সেঞ্চুরি সত্ত্বেও জয় ছিনিয়ে আনতে ব্যর্থ হয় প্রোটিয়া দল।
ফাইনালের গ্যালারিতে ভারতীয় ক্রিকেটের কিংবদন্তিরা ছিলেন সরব। রোহিত শর্মা, শচীন টেন্ডুলকার, সুনীল গাভাস্কার ও ভিভিএস লক্ষ্মণরা সরাসরি মাঠে বসে ভারতীয় মেয়েদের উৎসাহ দিয়েছেন। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো সাবেক ক্রিকেটারের উপস্থিতি চোখে পড়েনি। এমন পরিস্থিতিতে সামাজিক মাধ্যমে ভিডিওবার্তা প্রকাশ করে থানজা ভুর ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, “দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে সেখানে কারা উপস্থিত ছিল? সাবেক ক্রিকেটার যারা এই দেশকে ভালোবাসে, তারা সবাই কোথায়? এটা কি তাদের কাছে যথেষ্ট মর্যাদাপূর্ণ ইভেন্ট মনে হয়নি?” তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, “আমি অত্যন্ত হতাশ যে ক্রীড়া মন্ত্রী পর্যন্ত ফাইনালে উপস্থিত ছিলেন না। এই মেয়েরা কঠোর পরিশ্রম করে এই পর্যায়ে এসেছে। তারা ভালো খেলছিল, কিন্তু গ্যালারিতে নিজেদের দেশের কাউকে না দেখে কেমন লাগতে পারে তাদের? তারা কি ভেবেছিল আমরা হারব, তাই আগেভাগে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে?”
থানজা ভুরের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়, নারী ক্রিকেটে অর্জিত এই সাফল্যের মঞ্চে পুরুষ ক্রিকেটারদের অনুপস্থিতি দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রীড়াজগতে এক ধরনের মানসিক ব্যবধানের ইঙ্গিত দেয়। তিনি বলেন, “এই মেয়েরা দেশের পতাকা উঁচু করেছে। কিন্তু তাদের সমর্থনে যখন নিজ দেশের কিংবদন্তিরা অনুপস্থিত, তখন সেটি শুধু হতাশাজনকই নয়, বরং নিরুৎসাহজনকও।”
তবে ভারতের জয়কে অভিনন্দন জানাতে ভুরের কার্পণ্য ছিল না। তিনি বলেন, “ভারত, তোমরা বিশ্বকাপ জিতেছ। তোমরা ক্রিকেটে বেঁচে থাকো, নিশ্বাস নাও, তোমরাই এই সাফল্যের যোগ্য। অভিনন্দন ভারতের মেয়েদের।”
বিশ্বকাপ ফাইনালের পর দক্ষিণ আফ্রিকার খেলোয়াড়দের মনোবল ভেঙে পড়লেও ভারতীয় ক্রিকেটাররা মানবিক আচরণ দেখান। স্মৃতি মান্দানা, জেমিমাহ রদ্রিগেজ, রাধা যাদব ও টুর্নামেন্টসেরা দিপ্তি শর্মা পরাজিত প্রতিপক্ষ লরা উলভার্ট, মারিজান ক্যাপ ও নাদিনে ডি ক্লার্কদের সান্ত্বনা দেন।
উল্লেখযোগ্য যে, ভারতীয় নারী দল এবারই প্রথম কোনো বৈশ্বিক শিরোপা জিতেছে। দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এটি এক নতুন অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অন্যদিকে, দুইটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর এবারও ফাইনালে হেরে দক্ষিণ আফ্রিকার নারী দলের বিশ্ব শিরোপা অধরাই রয়ে গেল।
থানজা ভুরের ক্ষোভ তাই কেবল একটি ম্যাচের ফল নিয়ে নয়, বরং নারী ক্রিকেটারদের প্রতি সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সমর্থনের অভাব নিয়েই তার প্রশ্ন—যা দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রীড়াঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।