আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ভারত ও ইসরায়েলের সম্পর্ক বর্তমানে ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সার। ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও বৈশ্বিক প্রভাবের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ভারত এখন বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে গিডিয়ন সার এ মন্তব্য করেন।

ইসরায়েলের এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করছে এবং পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও সম্প্রসারিত হচ্ছে। তাঁর ভাষায়, “আমরা ভারতের বন্ধুত্বের জন্য কৃতজ্ঞ। প্রতিরক্ষা, কৃষি ও অর্থনীতিসহ নানা খাতে সহযোগিতা জোরদার করার প্রক্রিয়া চলছে।” তিনি আরও জানান, খুব শিগগিরই ভারত ও ইসরায়েল প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষর করবে।

গিডিয়ন সার বলেন, উভয় দেশই প্রযুক্তি, গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়, প্রতিরক্ষা ও সন্ত্রাসবাদ দমন—এই চারটি খাতে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। তাঁর মতে, সন্ত্রাসবাদের অভিজ্ঞতা ভারত ও ইসরায়েলের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য এবং দুই দেশই এ বিষয়ে বাস্তবভিত্তিক সহযোগিতার মাধ্যমে নিজেদের নিরাপত্তা জোরদার করছে। তিনি উল্লেখ করেন, “ভারত লস্কর-ই-তৈয়বা’র মতো সংগঠনকে সন্ত্রাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আমরাও একইভাবে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় দৃঢ় অবস্থান নিয়েছি।”

ইসরায়েলের অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা ভারতের সঙ্গে ভাগাভাগি করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আমাদের অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে ভারত সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে আরও কার্যকর ভূমিকা নিতে পারবে।” গিডিয়ন সার জানান, দুই দেশের মধ্যে নতুন প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা সহযোগিতা কাঠামো তৈরি হচ্ছে, যা কৌশলগত অংশীদারিত্বের বাস্তব রূপ দেবে।

সাক্ষাৎকারে তিনি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, “সেদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ছিলেন প্রথম বিশ্বনেতা, যিনি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে ফোন করেছিলেন এবং হামলাটির নিন্দা জানিয়েছিলেন। আমরা ভারতের সেই সহমর্মিতা কখনো ভুলব না।”

হামাসের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান নিয়ে গিডিয়ন সার বলেন, ইসরায়েলের লক্ষ্য হলো গাজার শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন এবং হামাসের সামরিক সক্ষমতা সম্পূর্ণ ধ্বংস করা। তাঁর মতে, “হামাস প্রকাশ্যে প্রতিপক্ষের লোকজনকে হত্যা করছে ও জনগণের মধ্যে ভীতি ছড়াচ্ছে। এই সন্ত্রাসী শাসনের অবসান ঘটানোই আমাদের উদ্দেশ্য।”

দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এমন কোনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয় যা ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ইসরায়েল এখন ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনাকেই সবচেয়ে বাস্তবসম্মত সমাধান হিসেবে দেখছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

গিডিয়ন সার বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত উন্মুক্ত ও কৌশলগত। তিনি আশা প্রকাশ করেন, দুই নেতা শিগগিরই মুখোমুখি বৈঠকে বসবেন। “ভারত ভবিষ্যতের প্রতীক আর ইসরায়েল আঞ্চলিক শক্তি—আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে বড় কিছু অর্জন করতে পারব,” বলেন সার।

এছাড়া তিনি জানান, আগামী বছর ভারতে আয়োজিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ইসরায়েল একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল পাঠাবে। তাঁর মতে, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্র দুই দেশের ভবিষ্যৎ সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

সাক্ষাৎকারের বিভিন্ন অংশে গিডিয়ন সার জোর দিয়ে বলেন, ভারত-ইসরায়েল সম্পর্ক এখন শুধু রাজনৈতিক বা প্রতিরক্ষা খাতে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি একটি “কৌশলগত অংশীদারিত্বে” পরিণত হয়েছে, যার লক্ষ্য পারস্পরিক নিরাপত্তা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা।