আন্তর্জাতিক ডেস্ক
গাজায় যুদ্ধবিরতি চলমান থাকলেও সীমিত সীমান্ত খোলার কারণে ত্রাণ প্রবেশে বড় বাধার সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে গাজার ফিলিস্তিনিরা তীব্র খাদ্যসংকটের মুখে পড়েছেন এবং তারা বিপুল দুর্ভোগে রয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর ত্রাণ সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে, তবে এটি অপ্রতুল। দক্ষিণ গাজার সীমান্ত দিয়ে ত্রাণ প্রবাহ হলেও উত্তর গাজায় ত্রাণ পৌঁছানো এখনও কঠিন হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, সীমিত প্রবেশের কারণে খাদ্য সহায়তা অত্যন্ত কম পরিমাণে পৌঁছাচ্ছে, যার ফলে হাজার হাজার মানুষ অনাহারে ভুগছে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মুখপাত্র আবির ইতেফা এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেছেন, “গাজায় ত্রাণ সরবরাহের জন্য আমাদের পূর্ণ প্রবেশাধিকার প্রয়োজন। আমরা সময়ের সঙ্গে দৌড়াচ্ছি। শীতের প্রকোপ আসছে, অথচ মানুষ এখনও ক্ষুধায় কাতরাচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, গাজা অঞ্চলের ৪৪টি স্থানে খাদ্য বিতরণ কার্যক্রম চালানোর পরও সরবরাহের পরিমাণ যথেষ্ট নয়।
ইতেফা জানিয়েছেন, ১০ অক্টোবর থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে ১০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে, তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। বিশেষ করে উত্তর গাজার পরিস্থিতি ভয়াবহ। গত আগস্টে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা গাজায় দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি ঘোষণা করেছিলেন।
গাজায় ত্রাণ সরবরাহের জন্য আরও সীমান্ত পয়েন্ট খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। তারা উল্লেখ করেছে, “উত্তর গাজার প্রবেশপথগুলো বন্ধ থাকায় ত্রাণ সরবরাহে বড় বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের কাফেলাগুলোকে দক্ষিণ দিকের দীর্ঘ এবং ঝুঁকিপূর্ণ পথে যেতে হচ্ছে।”
যুদ্ধবিরতির পর গাজার হাজার হাজার মানুষ তাদের বাড়িতে ফিরে গেছেন। তবে অধিকাংশ ফিলিস্তিনি তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংসপ্রাপ্ত দেখেন এবং এখনো তাঁবু বা অস্থায়ী আশ্রয়ে বসবাস করছেন। এসব পরিস্থিতিতে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা আরও ত্রাণ সরবরাহের অনুমতি দেওয়ার জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
গাজার সরকারি তথ্য অফিস জানায়, ১০ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ৩ হাজার ২০৩টি বাণিজ্যিক ও ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে, যার মধ্যে গড়ে দিনে ১৪৫টি ট্রাক প্রবেশ করেছে। তবে যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুযায়ী দৈনিক ৬০০টি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করার কথা ছিল।
এছাড়া, মঙ্গলবার গাজা সিটি এবং উত্তর গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় দুই জন নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২৪০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং ৬০৭ জন আহত হয়েছেন।
গাজার বর্তমান মানবিক পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটাপন্ন এবং ত্রাণ সরবরাহে আরও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি আহ্বান জানানো হচ্ছে।