অর্থনীতি ডেস্ক
ঢাকা, ৫ নভেম্বর ২০২৫: রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দামে ব্যাপক বৃদ্ধি দেখা দিয়েছে। গত দুই দিনে প্রতি কেজিতে ২০ থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে বর্তমানে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকায় পৌঁছেছে। তিন দিন আগেও এ দাম ছিল ৮০ থেকে ৮৫ টাকার মধ্যে।
বাজারে এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ বাজারে আসবে। মন্ত্রণালয় জানায়, ইতোমধ্যে আট হাজার এয়ার ফ্লো মেশিনের মাধ্যমে পর্যাপ্ত পরিমাণ পেঁয়াজ সংরক্ষিত রয়েছে, যা সরবরাহে ঘাটতি কাটাতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পেঁয়াজের এই মূল্যবৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে ভোক্তা অধিদপ্তর, ট্যারিফ কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোকে মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বুধবারের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান জানান, কৃষি সচিবের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া গেছে যে, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে নতুন পেঁয়াজ বাজারে সরবরাহ শুরু হবে। তিনি বলেন, “আমরা কয়েকটি সংস্থাকে বিষয়টি অনুসন্ধানের দায়িত্ব দিয়েছি। যদি সত্যিই ঘাটতির প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে।”
বর্তমানে দেশে পেঁয়াজের বাৎসরিক চাহিদা প্রায় ২৬ থেকে ২৭ লাখ টন বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত মৌসুমে দেশে প্রায় ৩৮ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। তবে উৎপাদন-পরবর্তী পর্যায়ে সঠিক সংরক্ষণব্যবস্থার অভাবে প্রতি বছর প্রায় ২৫ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে প্রতিবছর ৬ থেকে ৭ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়।
পেঁয়াজের বাজারে স্থিতি আনতে সরকার উৎপাদন ও সংরক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়নে বিশেষ নজর দিচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তারা বলেন, এ বছর নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে সংরক্ষণব্যবস্থা সম্প্রসারণ করা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে বাজারে সরবরাহ ঘাটতি কমাতে সাহায্য করবে।
এদিকে, কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য ইমপোর্ট পারমিট (আইপি) আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইংয়ে এ পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার আবেদন জমা পড়েছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির পেছনে মৌসুমি প্রভাবের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের মজুতদারির প্রবণতাও ভূমিকা রাখতে পারে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হলে বাজারে সরবরাহ বাড়বে এবং মূল্য স্থিতিশীলতা ফিরবে বলে আশা করা হচ্ছে।