আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকি অঙ্গরাজ্যের লুইসভিলে ইউপিএস-এর একটি কার্গো প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে সাতজন নিহত এবং অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লুইসভিল মুহাম্মদ আলী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পরপরই এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন অঙ্গরাজ্যের গভর্নর অ্যান্ডি বেশেয়ার।
কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটের দিকে ইউপিএস ফ্লাইট ২৯৭৬ বিমানটি লুইসভিল বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করেছিল। উড্ডয়নের পর অল্প সময়ের মধ্যেই বিমানটি ভারসাম্য হারিয়ে রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে এবং আশপাশের ভবনগুলোতে আঘাত হানে। দুর্ঘটনার পর আকাশজুড়ে ঘন কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে।
গভর্নর অ্যান্ডি বেশেয়ার এক বিবৃতিতে বলেন, নিহতদের মধ্যে কার্গো প্লেনটির তিনজন ক্রু সদস্য থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, উদ্ধারকাজ অব্যাহত রয়েছে এবং আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছেন, আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
ইউপিএস ফ্লাইটটি যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই অঙ্গরাজ্যের হনোলুলুর উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল। কার্গো প্লেনটি প্রায় ৩৮ হাজার গ্যালন (প্রায় ১ লাখ ৪৪ হাজার লিটার) জ্বালানি বহন করছিল বলে নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। জ্বালানি বিস্ফোরণের ফলে আশপাশের অন্তত দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে একটি পেট্রোলিয়াম পুনর্ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
লুইসভিল দমকল বিভাগের প্রধান ব্রায়ান ও’নিল জানান, দুর্ঘটনার পরপরই দমকল বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তিনি বলেন, “আগুন এখন প্রায় সম্পূর্ণভাবে নিভিয়ে ফেলা হয়েছে, তবে নিরাপত্তা নিশ্চিতে উদ্ধারকর্মীরা এখনও ঘটনাস্থলে কাজ করছেন।”
অন্যদিকে, লুইসভিল মুহাম্মদ আলী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সামাজিক মাধ্যম এক্সে জানিয়েছে, দুর্ঘটনার কারণে মঙ্গলবার সন্ধ্যার সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। তারা যাত্রী ও কার্গো নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
স্থানীয় ও ফেডারেল তদন্তকারীরা দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) এবং ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (এনটিএসব) দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে যৌথ তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, উড্ডয়নের সময় যান্ত্রিক ত্রুটি বা জ্বালানিজনিত সমস্যার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
দুর্ঘটনার পর লুইসভিল অঞ্চলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে এবং আশপাশের এলাকায় প্রবেশাধিকার সীমিত করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জনগণকে দুর্ঘটনাস্থল থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রে কার্গো বিমানের দুর্ঘটনা তুলনামূলকভাবে কমলেও, এই ঘটনার পর কার্গো পরিবহন নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ও তদারকির বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।