আন্তর্জাতিক ডেস্ক
জাপানের উত্তরাঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় বাড়তে থাকা ভাল্লুকের আক্রমণ রোধে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের অনুরোধে নেওয়া এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো বন্যপ্রাণীর হামলা থেকে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
দেশটির পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে এখন পর্যন্ত জাপানজুড়ে ১০০টিরও বেশি ভাল্লুকের আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ১২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের বসবাস ছিল আকিতা প্রিফেকচারে, যেখানে কাজুনো ও নিকটবর্তী ইওয়াতে অঞ্চল অবস্থিত।
টোকিওতে বুধবার (৫ নভেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে জাপানের ডেপুটি চিফ ক্যাবিনেট সেক্রেটারি কেই সাতো বলেন, “ভাল্লুকের আক্রমণের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে এবং তারা মানুষের বসতিপূর্ণ এলাকায় প্রবেশ অব্যাহত রেখেছে। তাই এই সংকট মোকাবিলার কার্যক্রম বন্ধ রাখা সম্ভব নয়।”
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, আকিতা প্রিফেকচারে এ বছর ভাল্লুক দেখা যাওয়ার ঘটনা গত বছরের তুলনায় ছয়গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এখন ৮ হাজারেরও বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত সপ্তাহে আকিতার গভর্নর আনুষ্ঠানিকভাবে জাপানের সেলফ-ডিফেন্স ফোর্সের (এসডিএফ) সহায়তা চান।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় সেনারা পাহাড়ি এলাকায় ভাল্লুক ধরার জন্য ব্যবহৃত বিশেষ বক্স ট্র্যাপ স্থাপন, পরিবহন ও পরিদর্শনে সহায়তা করবে। এর পাশাপাশি স্থানীয়দের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে—বিশেষ করে সন্ধ্যার পর বাইরে বের না হতে, ঘরের কাছাকাছি খাবার না রাখতে এবং আত্মরক্ষার জন্য সঙ্গে ঘণ্টা রাখতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
প্রাণিবিজ্ঞানীরা বলছেন, এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতির পেছনে প্রধান কারণ হলো বনের খাদ্যাভাব। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে বাদাম ও ফলের মতো প্রাকৃতিক খাদ্যের প্রাপ্যতা কমে গেছে। ফলে ভাল্লুকগুলো বনের ভেতর খাদ্য সংকটে পড়ে মানব বসতিতে ঢুকে পড়ছে।
জাপানে সাধারণত শরৎ মৌসুমে ভাল্লুকের আক্রমণের হার কিছুটা বাড়ে, কারণ এ সময় তারা শীতের জন্য খাদ্য সঞ্চয় করে। তবে এবারের বৃদ্ধি নজিরবিহীন বলে কর্মকর্তারা মনে করছেন। সরকারের পক্ষ থেকে বনাঞ্চলে নিরাপত্তা টহল বাড়ানো, জনগণের জন্য সচেতনতা প্রচারণা চালানো এবং ভাল্লুকের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি ব্যবস্থা জোরদার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতি কেবল মানব-প্রাণী সংঘাতের ইঙ্গিতই নয়, বরং জাপানের পরিবেশগত ভারসাম্যে নতুন এক সংকটের ইঙ্গিত বহন করছে।