আন্তর্জাতিক ডেস্ক
গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে আরও এক ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির (আইসিআরসি) কাছে হস্তান্তর করেছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন হামাস। এ নিয়ে যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে সংগঠনটি মোট ২০ জন জীবিত বন্দিকে মুক্তি এবং ২২ জনের মরদেহ ফেরত দিয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) ইসরায়েলি সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে যে তাদের এক বন্দির মরদেহ রেডক্রসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়েছে। সেনাবাহিনী জানায়, গাজার পূর্বাঞ্চলে চলমান অনুসন্ধান ও পুনরুদ্ধার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মরদেহটি শনাক্তের পর রেডক্রসের তত্ত্বাবধানে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এর আগে বুধবার হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেড এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, গাজা সিটির শুজাইয়া এলাকার ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে এক ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ উদ্ধার করে তারা। পরে আন্তর্জাতিক রেডক্রসের কর্মকর্তাদের কাছে মরদেহটি হস্তান্তর করা হয়। হামাস দাবি করেছে, চলমান যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী তারা এখন পর্যন্ত মুক্তি দেওয়া বন্দিদের পাশাপাশি মরদেহ ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে।
ইসরায়েলি পক্ষ জানিয়েছে, তারা ফেরত পাওয়া মরদেহগুলোর পরিচয় শনাক্তের কাজ করছে। দেশটির কর্মকর্তারা জানান, এর আগে পাওয়া একটি মরদেহ তাদের নিখোঁজ বন্দিদের তালিকার কারও সঙ্গে মেলেনি। ফলে এখন পর্যন্ত কতজন বন্দির মরদেহ ফেরত এসেছে, সে বিষয়ে চূড়ান্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনার অগ্রগতি নির্ভর করছে সব নিখোঁজ বন্দির মরদেহ ফেরতের ওপর।
অন্যদিকে হামাসের মুখপাত্র বলেছেন, গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের কারণে নিখোঁজদের মরদেহ উদ্ধার ও শনাক্ত করতে সময় লাগছে। হামাসের দাবি, ইসরায়েলি বিমান হামলায় বহু ভবন ধসে পড়ায় উদ্ধার কার্যক্রম জটিল হয়ে পড়েছে, এবং এতে মানবিক সংস্থাগুলোর সহায়তা প্রয়োজন।
চলমান যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের চুক্তি অনুযায়ী, ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছেড়ে দেওয়ার কথা রয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি ইসরায়েলি বন্দির মরদেহের বিনিময়ে ইসরায়েল ১৫ জন ফিলিস্তিনির মরদেহ ফেরত দেবে বলে চুক্তিতে নির্ধারিত হয়েছে। তবে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় বিলম্ব ও মরদেহের অবস্থান শনাক্তে জটিলতা দেখা দিয়েছে।
গাজার কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির আওতায় যে ফিলিস্তিনিদের মরদেহ ফিরিয়ে দিয়েছে, তার বেশিরভাগই বিকৃত অবস্থায় ছিল এবং তাতে নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে ইসরায়েলি পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো গাজার মানবিক পরিস্থিতিকে “গুরুতর সংকটপূর্ণ” বলে উল্লেখ করেছে। অবকাঠামো ধ্বংস, চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতি ও খাদ্য সংকটের কারণে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যুদ্ধবিরতি টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি উভয় পক্ষকে বন্দি বিনিময় প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার আহ্বান জানিয়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের ধারাবাহিক বিমান ও স্থল অভিযানে গাজায় এখন পর্যন্ত ৬৮ হাজার ৮৭০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন এক লাখ ৭০ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি মানুষ।
চলমান এই যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময়ের অগ্রগতি গাজার মানবিক পরিস্থিতি উন্নয়নের সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, তবে টেকসই শান্তি নির্ভর করছে উভয় পক্ষের পারস্পরিক আস্থা ও আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার কার্যকারিতার ওপর।