আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ন্যাটোকে হারানো সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন সামরিক জোটটির মহাসচিব মার্ক রুটে। তার মতে, সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ঐক্য, পারস্পরিক প্রতিরক্ষা অঙ্গীকার ও সম্মিলিত সামরিক সক্ষমতাই ন্যাটোকে অজেয় করে তুলেছে। এই ঐক্যই প্রতিপক্ষদের জন্য জোটের কোনো সদস্য রাষ্ট্রে আক্রমণকে অসম্ভব করে তুলেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বুধবার (৫ নভেম্বর) রোমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্টে প্রেসিডেন্ট নিকুশর দানের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রুটে। সফরকালে তিনি রোমানিয়ার প্রতিরক্ষা ভূমিকা ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিষয়ে আলোচনা করেন।
রুটে বলেন, “ন্যাটোর মূল নীতি হলো সম্মিলিত প্রতিরক্ষা। যদি রোমানিয়া আক্রান্ত হয়, তাহলে আরও ৩১টি দেশ একসঙ্গে রোমানিয়ার পাশে দাঁড়াবে। এভাবেই ন্যাটো কাজ করে। এই ঐক্য ও প্রতিরক্ষার মানসিকতাই আমাদের হারানোকে অসম্ভব করে তোলে। আমি বিশ্বাস করি, কেউ কখনও এমন চেষ্টা করবে না।”
তিনি রোমানিয়ার কৃষ্ণসাগর অঞ্চলে ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, দেশটি ন্যাটোর পূর্বাংশের নিরাপত্তা জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। রুটের মতে, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া ও তুরস্কের মধ্যে সামরিক ও গোয়েন্দা সহযোগিতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে উদ্ভূত নতুন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়।
ন্যাটো মহাসচিব আরও জানান, সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার ড্রোন একাধিকবার রোমানিয়ার আকাশসীমায় প্রবেশ করেছে, যা জোটটি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছে। তিনি বলেন, “নিরস্ত্রীকরণই আমাদের প্রতিরক্ষার ভিত্তি। ন্যাটো প্রস্তুত আছে এবং সদস্য রাষ্ট্রের নিরাপত্তা রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”
রুটে বলেন, ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি দীর্ঘদিনের সমন্বিত পরিকল্পনার অংশ। সাম্প্রতিক সময়ে রোমানিয়াসহ পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন ঘাঁটিতে মার্কিন সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এটি নিয়মিত সামরিক প্রস্তুতির অংশ, এ নিয়ে অতিরিক্ত উদ্বেগের কারণ নেই।”
মার্ক রুটে আরও উল্লেখ করেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর মধ্যে সহযোগিতা ক্রমেই বাড়ছে, বিশেষ করে প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি উন্নয়ন ও অ্যান্টি-ড্রোন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে। তিনি বলেন, “এই যৌথ উদ্যোগ আমাদের সম্মিলিত নিরাপত্তাকে আরও শক্তিশালী করছে। আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সমন্বয়ই ভবিষ্যতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ভিত্তি হয়ে উঠছে।”
অন্যদিকে, রোমানিয়ার প্রেসিডেন্ট নিকুশর দান বলেন, তার দেশ ন্যাটোর পূর্বাংশের প্রতিরক্ষা জোরদারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি জানান, রোমানিয়া প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশগ্রহণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। দানের মতে, রোমানিয়ার অবস্থান ন্যাটোর পূর্ব সীমান্তে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং দেশের নিরাপত্তা জোটের সমন্বিত প্রতিরক্ষার অংশ হিসেবে বিবেচিত।
বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধি জোটটির প্রতিরক্ষা অবস্থানকে আরও সুসংহত করেছে। কৃষ্ণসাগর অঞ্চলে রাশিয়ার সামরিক উপস্থিতি ও সীমান্তবর্তী আকাশসীমায় ঘনঘন অনুপ্রবেশ ন্যাটো সদস্যদের জন্য নতুন নিরাপত্তা উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।
রুটের এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এল, যখন ইউরোপজুড়ে ন্যাটোর প্রতিরক্ষা বাজেট ও কৌশলগত অগ্রাধিকার পুনর্বিন্যাস নিয়ে আলোচনাও চলছে। জোটের কর্মকর্তারা বলছেন, ন্যাটোর ঐক্য ও সমন্বিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেবল সামরিক নয়, বরং রাজনৈতিক দৃঢ়তার প্রতিফলনও বটে।
রুটে তার বক্তব্যে পুনর্ব্যক্ত করেন, “ন্যাটো ঐক্যবদ্ধ, প্রস্তুত এবং প্রতিটি সদস্য দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই ঐক্যই আমাদের শক্তি এবং এই শক্তিকেই কেউ পরাজিত করতে পারবে না।”