আন্তর্জাতিক ডেস্ক
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার ওপর থেকে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ সংক্রান্ত একটি খসড়া প্রস্তাব ইতোমধ্যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপন করেছে ওয়াশিংটন। সোমবার (১০ নভেম্বর) হোয়াইট হাউজে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও আল-শারার বৈঠকের আগেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
গত কয়েক মাস ধরেই যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা শিথিলের আহ্বান জানিয়ে আসছে। এর ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের মে মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক ঘোষণায় সিরিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন। আন্তর্জাতিক মহলে এটি ওয়াশিংটনের পররাষ্ট্রনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হিসেবে বিবেচিত হয়। যদিও জাতিসংঘে উত্থাপিত নতুন প্রস্তাবটি এখনো গৃহীত হয়নি, তবুও সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের আসন্ন হোয়াইট হাউজ সফরের সম্ভাবনা রয়েছে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।
রয়টার্সের তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই খসড়া প্রস্তাবে সিরিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আনাস খাত্তাবের ওপর থেকেও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে প্রস্তাবটি কখন নিরাপত্তা পরিষদে ভোটের জন্য তোলা হবে, তা এখনো নিশ্চিত করা হয়নি।
নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে অন্তত নয়টি সদস্যের সমর্থন এবং স্থায়ী পাঁচ সদস্য—রাশিয়া, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য—এর মধ্যে কোনো দেশের ভেটো না থাকলে প্রস্তাবটি গৃহীত হতে পারে।
সিরিয়ায় ১৩ বছরের দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের পর গত বছরের ডিসেম্বরে সশস্ত্র বিরোধী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) এক অভিযানে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে। নুসরা ফ্রন্ট নামে পরিচিত এই গোষ্ঠীটি ২০১৬ সালে আল-কায়েদার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক ছিন্ন করে, যদিও ২০১৪ সাল থেকেই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে।
জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা ব্যক্তি হিসেবে প্রেসিডেন্ট আল-শারা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আনাস খাত্তাবসহ এইচটিএসের একাধিক সদস্যের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, সম্পদ জব্দ ও অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে। তবে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞা কমিটি গত কয়েক মাসে আল-শারার ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা একাধিকবার সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করেছে, যাতে তিনি কূটনৈতিক বৈঠকে অংশ নিতে পারেন।
এদিকে, জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পর্যবেক্ষক কমিটির জুলাইয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, চলতি বছরে আল-কায়েদা ও এইচটিএসের মধ্যে কোনো সক্রিয় সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সিরিয়ায় নিরাপত্তা ও মানবিক পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হলেও বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা ও অর্থনৈতিক সংকট দেশটির পুনর্গঠন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্যোগ যদি নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত হয়, তবে তা সিরিয়ার সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ হতে পারে। একইসঙ্গে এটি মধ্যপ্রাচ্যে নতুন কূটনৈতিক ভারসাম্য সৃষ্টি করতে পারে, যেখানে রাশিয়া ও চীনের অবস্থানও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে প্রস্তাবটি পাসের আগে নিরাপত্তা পরিষদের ভেতর মতপার্থক্য এবং রাজনৈতিক বিবেচনা বড় বাধা হিসেবে দেখা দিতে পারে।