আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি মঙ্গলবার রাতে বিজয় ভাষণে ঘোষণা দিয়েছেন, শহরটি আর বিভাজন ও পক্ষপাতের রাজনীতির স্থান হবে না। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “ডোনাল্ড ট্রাম্প, আমি জানি আপনি শুনছেন। আমার কথা মনে রাখুন, আওয়াজটা বাড়ান!”
ব্রুকলিনে সমর্থকদের উদ্দেশে উচ্ছ্বসিত ভাষণে মামদানি বলেন, সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমোর বিরুদ্ধে নিরঙ্কুশ জয়ের মাধ্যমে নিউইয়র্ক প্রমাণ করেছে, এই শহরই অন্ধকার রাজনীতির সময়ে আলোর দিশা দেখাবে। তিনি উল্লেখ করেন, “এখানে আমরা ভালোবাসার মানুষের পাশে দাঁড়াই—আপনি অভিবাসী হোন, ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের সদস্য হোন, কৃষ্ণাঙ্গ নারী হোন যাদের ট্রাম্প সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছিলেন, কিংবা একক মা হোন যিনি খাদ্যদ্রব্যের দাম কমার অপেক্ষায় আছেন—সবাই নিউইয়র্কের অংশ।”
মামদানি নিউইয়র্ক শহরের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। বিজয় ভাষণে তিনি বলেন, “এখন আর ইসলামবিদ্বেষের প্রচার করে কেউ নিউইয়র্কে জিততে পারবে না।”
বক্তৃতার শেষ মুহূর্তে ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে মামদানি বলেন, “যদি এমন কোনো শহর থাকে, যা ট্রাম্পকে দেখাতে পারে কীভাবে তাকে হারাতে হয়, তবে সেটি সেই শহর, যেখান থেকেই তার উত্থান ঘটেছিল।” উল্লেখ্য, ১৯৪৬ সালের ১৪ জুন ডোনাল্ড ট্রাম্প নিউইয়র্কে জন্মগ্রহণ করেন এবং এখান থেকেই তাদের পারিবারিক ব্যবসার বিকাশ ঘটে।
তিনি আরও বলেন, “কোনো স্বৈরশাসককে ভয় দেখানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো সেই ব্যবস্থাকে ভেঙে দেওয়া, যা তাকে ক্ষমতা দিয়েছে। এভাবেই আমরা ট্রাম্পকে থামাবো ও তার পরের জনকেও।”
রাত ১২টার দিকে ৯১ শতাংশ ভোট গণনা শেষে দেখা যায়, মামদানি কুয়োমোর চেয়ে ৮ শতাংশের বেশি ব্যবধানে এগিয়ে আছেন। বিশ্লেষকদের মতে, এটি ডেমোক্র্যাটিক সমাজতান্ত্রিক প্রার্থীর জন্য একটি বড় উত্থান এবং কুয়োমোর রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সংকেত। কুয়োমো স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ব্যয়বহুল প্রচারণা চালিয়েছিলেন, কিন্তু তা ফলপ্রসূ হয়নি।
বিজয় ভাষণে মামদানি তার নির্বাচনী অঙ্গীকারগুলো পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে ভাড়াটিয়াদের অধিকার রক্ষা, ধনীদের সুবিধাভোগী দুর্নীতির সংস্কৃতি অবসান, শ্রমিক অধিকার সম্প্রসারণ ও ইউনিয়ন শক্তিশালীকরণ তার প্রধান অগ্রাধিকার হবে।
তিনি বলেন, “আমরা জানি, যেমন ট্রাম্পও জানেন—যখন শ্রমিকদের অধিকার অটুট থাকে, তখন তাদের শোষণ করতে চাওয়া কর্তা শ্রেণিই ক্ষুদ্র হয়ে পড়ে।”
মামদানি বলেন, “নিউইয়র্ক অভিবাসীদের শহর—অভিবাসীদের হাতে গড়া, তাদের দ্বারা চালিত, এবং আজ থেকে অভিবাসীদের হাতেই নেতৃত্ব থাকবে।” তিনি ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে বলেন, “আমাদের কাউকে আঘাত করতে চাইলে, আগে আমাদের সবাইকে মোকাবিলা করতে হবে।”
তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, “৫৮ দিন পর আমরা যখন সিটি হলে প্রবেশ করব, প্রত্যাশা অনেক থাকবে, এবং আমরা তা পূরণ করব।”
মঙ্গলবারের নির্বাচনে মামদানির পাশাপাশি আরও কয়েকজন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বড় জয় অর্জন করেছেন। মিকি শেরিল নির্বাচিত হয়েছেন নিউ জার্সির গভর্নর হিসেবে এবং অ্যাবিগেইল স্প্যানবার্গার হয়েছেন ভার্জিনিয়ার প্রথম নারী গভর্নর।
এর পর রাতেই ট্রাম্প তার সামাজিক মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ পোস্ট করে এসব ফলাফলের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “কংগ্রেস যেন অবিলম্বে ফিলিবাস্টার প্রথা বাতিল করে ভোটাধিকারের নতুন সংস্কার আনে, যার মধ্যে থাকবে কঠোর ভোটার আইডি আইন ও ডাকযোগে ভোট নিষিদ্ধের দাবি।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মামদানির এই জয় মার্কিন রাজনীতিতে প্রগতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আন্দোলনের নতুন ধারা তৈরি করতে পারে। নিউইয়র্কের মতো বৈচিত্র্যময় শহরে একজন মুসলিম ও সমাজতান্ত্রিক প্রার্থীর বিজয় কেবল স্থানীয় নয়, জাতীয় পর্যায়েও প্রতিধ্বনি তুলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।