খেলাধুলা ডেস্ক
ফ্লোরিডার মায়ামিতে অনুষ্ঠিত আমেরিকা বিজনেস ফোরামে (America Business Forum) আর্জেন্টাইন ফুটবল তারকা লিওনেল মেসিকে বিশেষভাবে সম্মানিত করা হয়েছে। মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) ক্লাব ইন্টার মায়ামির হয়ে যোগদানের পর যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলে ব্যাপক জনপ্রিয়তা এনে দেওয়ার স্বীকৃতিস্বরূপ মায়ামি শহরের মেয়র ফ্রান্সিস সুয়ারেজ মেসির হাতে তুলে দিয়েছেন শহরের প্রতীকি চাবি।
২০২৩ সালের ১৫ জুলাই প্যারিস সাঁ জাঁ (পিএসজি) ছেড়ে ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেন লিওনেল মেসি। তার আগমনের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারে নতুন করে আগ্রহ দেখা দেয়। বেড়ে যায় টিকিট বিক্রি ও সম্প্রচারের দর্শকসংখ্যা, কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায় ক্লাব মার্চেন্ডাইজের বিক্রি। ফলে এমএলএস ও মায়ামি শহর কর্তৃপক্ষের কাছে মেসির অবদান হয়ে ওঠে অনস্বীকার্য।
গত বুধবার ফ্লোরিডার কাসেয়া সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মেয়র সুয়ারেজ বলেন, “আমাদের শহর, রাষ্ট্র ও বিশ্ব ফুটবলের জন্য আপনি যা করেছেন, তার স্বীকৃতি হিসেবে এই চাবি তুলে দিতে পেরে আমি গর্বিত।” এই প্রতীকী চাবি মেসির অবদান ও জনপ্রিয়তার প্রতি শহর কর্তৃপক্ষের কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ বলে উল্লেখ করা হয়।
ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেওয়ার পর প্রথম মৌসুমেই ক্লাবটি ইতিহাস গড়ে জেতে লিগস কাপের শিরোপা। পরের বছর ২০২৪ সালে সর্বাধিক পয়েন্ট অর্জনের রেকর্ড গড়ে দলটি জিতে নেয় সাপোর্টারস শিল্ড। ক্লাবের সহ-মালিক জর্জ মাস অনুষ্ঠানে বলেন, “আমাদের অধিনায়ক ও ১০ নম্বর জার্সিধারীর প্রতি এই শহরের পক্ষ থেকে এটি একটি ছোট উপহার। এটি কেবল আপনার জন্য নয়, আপনার স্ত্রী আন্তোনেলা রোকুজ্জো এবং পরিবারের জন্যও।”
৩৮ বছর বয়সেও লিওনেল মেসি এমএলএসের মাঠে নিজের দক্ষতা ধরে রেখেছেন। তিনি টানা দ্বিতীয় মৌসুমে এমএলএসের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন এবং ২০২৫ মৌসুমে গোল্ডেন বুট জয় করেছেন সর্বাধিক গোলদাতা হিসেবে। সম্মাননা গ্রহণের পর মেসি বলেন, “ধন্যবাদ, আমি অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছি। আমরা এখানে শুরু থেকেই ভালোবাসা পেয়েছি, এজন্য কৃতজ্ঞ। এই শহরে থাকতে পেরে সত্যিই আনন্দিত।”
সম্প্রতি মেসি নতুন করে আরও তিন বছরের জন্য ইন্টার মায়ামির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেছেন। অনুষ্ঠানে তিনি নিজের ক্যারিয়ারের পূর্ববর্তী অধ্যায়ের কথাও স্মরণ করেন। বার্সেলোনায় দীর্ঘ সময় কাটানো প্রসঙ্গে মেসি বলেন, “প্যারিস থেকে এখানে আসা সময়টা আমাদের জন্য কঠিন ছিল, কারণ আমাদের জীবনের বড় সময়টা কেটেছে বার্সেলোনায়। সেখানে আমাদের পরিবার, সন্তানরা সবাই সুখে ছিল। মাত্র ১৩ বছর বয়সে আমি সেখানে যাই, ২০ বছর বয়সে আমার স্ত্রীও যোগ দেয়। প্রথমে মানিয়ে নিতে কষ্ট হলেও পরে আমরা ভালোভাবেই অভ্যস্ত হয়ে যাই।”
তিনি আরও বলেন, “ইন্টার মায়ামিতে এই অধ্যায় চালিয়ে যেতে পেরে আমি খুব আনন্দিত। পরিবার এখানে সুখে আছে, তবে এই অধ্যায় শেষ হবে ভেবে কিছুটা উদ্বিগ্নও। মায়ামিতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তটা ছিল সম্পূর্ণ পারিবারিক। আমরা যেখানে থাকতে চাই, সেখানে আসতে পেরে জীবন অনেক সহজ হয়েছে। এখানে শুরু থেকেই যেভাবে ভালোবাসা পেয়েছি, তা অবিশ্বাস্য।”
এভাবে মায়ামি শহরের প্রতীকি চাবি হাতে নিয়ে লিওনেল মেসি কেবল নিজের নয়, পুরো মায়ামির ক্রীড়াঙ্গনের এক নতুন ইতিহাস রচনা করলেন। এই সম্মাননা যুক্তরাষ্ট্রে ফুটবলের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তায় তার অবদানের প্রতীক হিসেবেও দেখা হচ্ছে।