অর্থনীতি ডেস্ক
বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের সময়সীমা পেছানোর দাবিতে ব্যবসায়ীদের বাড়তি উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশ বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভের কার্যালয়ের পরিচালক রোনাল্ড মোলেরুসের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল আগামী সপ্তাহে ঢাকা সফরে আসছেন। প্রতিনিধিদলটি ১০ থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করবে এবং পরিস্থিতি সরেজমিনে মূল্যায়ন করবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সফরকালীন সময়ে জাতিসংঘ প্রতিনিধিদল সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, ব্যবসায়িক সংগঠন এবং নীতি-নির্ধারক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবে। মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের ব্যবসায়িক খাত ও রপ্তানি শিল্পের উদ্বেগগুলো ঘনিষ্ঠভাবে পর্যালোচনা করা এবং এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি ও সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জগুলো বোঝা।
বাংলাদেশ ২০২6 সালে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তীর্ণ হওয়ার পথে রয়েছে। তবে, এই উত্তরণ প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যবসায়ী মহলে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাণিজ্যিক সংগঠনগুলোর মতে, এলডিসি সুবিধা হারালে দেশের রপ্তানি খাত বড় ধরনের চাপে পড়বে। বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াসহ প্রধান বাজারগুলোতে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ। এই সুবিধা বাতিল হলে রপ্তানি আয় ৬ থেকে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প, যা বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশের বেশি জোগান দেয়, তা বড় ধরনের প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে। শুল্কমুক্ত সুবিধা হারালে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে, যা আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা টিকিয়ে রাখা কঠিন করে তুলবে। ফলে তারা এলডিসি উত্তরণের সময়সীমা অন্তত কয়েক বছর পিছিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও কিছু বাণিজ্য সুবিধা ধরে রাখার জন্য বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনায় রয়েছে। বাংলাদেশ ‘ইইউ জিএসপি+’ (Generalised Scheme of Preferences Plus) প্রোগ্রামে অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা এলডিসি পরবর্তী সময়ে আংশিক বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখবে।
জাতিসংঘ প্রতিনিধিদলের এই সফরকে সরকার নীতিনির্ধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছে। কর্মকর্তারা আশা করছেন, তাদের মূল্যায়ন প্রতিবেদনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুসংহত হবে এবং ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ দূরীকরণে সহায়ক পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ২০১৮ সালে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জন করে এবং ২০২১ সালে দ্বিতীয়বারের মতো সেই যোগ্যতা অর্জন নিশ্চিত হয়। বর্তমানে দেশটি উত্তরণ-পরবর্তী প্রস্তুতি ও নীতি সামঞ্জস্যের পর্যায়ে রয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিনিধিদলের এই সফর সেই প্রক্রিয়ারই অংশ, যার মাধ্যমে এলডিসি উত্তরণে বাংলাদেশের অগ্রগতি ও প্রস্তুতি আনুষ্ঠানিকভাবে পর্যালোচনা করা হবে।