অর্থনীতি ডেস্ক
পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার শূন্য ঘোষণার প্রতিবাদে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা আজ (৬ নভেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ভবনের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে অংশ নেন সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
মানববন্ধন থেকে বিনিয়োগকারীরা অর্থ উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করেন। তারা ঘোষণা দেন, আগামী শনিবার (৮ নভেম্বর) রাত ১২টার মধ্যে এসব কর্মকর্তার পদত্যাগ না হলে মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) দুপুর ২টায় ওই পাঁচ ব্যাংকের আমানতকারী ও বিনিয়োগকারীদের নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হবে।
মানববন্ধনে সংগঠনের সভাপতি মিজানুর রশিদ চৌধুরী, সিনিয়র জয়েন্ট সেক্রেটারি সাজ্জাদুল হক, জয়েন্ট সেক্রেটারি মো. আজাদ ও যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ইশতেয়াক উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে শুরু হওয়া ব্যাংক একীভূতকরণের প্রক্রিয়াটি “ভুল ও অযৌক্তিক”। তারা অভিযোগ করেন, ব্যাংকগুলো মার্জ করার সিদ্ধান্তের ফলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বক্তারা দাবি করেন, যদি ব্যাংকগুলোর একীভূতকরণ করতেই হয়, তবে তা পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের অধীনে সম্পন্ন করা উচিত।
সংগঠনের সভাপতি মিজানুর রশিদ চৌধুরী বলেন, “মার্জারের পুরো প্রক্রিয়াটা বিনিয়োগকারীদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে। উদ্যোক্তা-পরিচালকরা আগে থেকেই তাদের শেয়ার বিক্রি করে বেরিয়ে গেছেন। এখন যারা ক্ষতিগ্রস্ত, তারা মূলত সাধারণ ও স্বল্প মূলধনী বিনিয়োগকারী।” তিনি সতর্ক করেন, বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকা শেয়ারগুলোর কোনো মূল্য না থাকলে অনেকেই স্থায়ীভাবে পুঁজিবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন।
সিনিয়র জয়েন্ট সেক্রেটারি সাজ্জাদুল হক বলেন, “অল্প মেয়াদের একটি সরকার এত বড় সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে দেশের আর্থিক খাতে পড়বে। পাঁচ ব্যাংকের হাজার হাজার বিনিয়োগকারীর শেয়ার শূন্য ঘোষণা করায় আমরা এই সিদ্ধান্তের ন্যায়সংগততা নিয়ে প্রশ্ন তুলছি।” তিনি আরও জানান, ঘেরাও কর্মসূচির সঙ্গে ব্যাংকের আমানতকারীরাও যুক্ত হবেন।
এর আগে সকালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ওই পাঁচ ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন স্থগিত ঘোষণা করে। দুই পুঁজিবাজার তাদের ওয়েবসাইটে জানায়, ব্যাংক রেজোলিউশন অধ্যাদেশ ২০২৫-এর ধারা ১৫ অনুসারে ৫ নভেম্বর থেকে ব্যাংকগুলোকে অকার্যকর ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর শেয়ার লেনদেন বন্ধ থাকবে।
লেনদেন স্থগিত হওয়া ব্যাংকগুলো হলো—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), এক্সিম ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংক।
ডিএসই জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ নভেম্বর চিঠির মাধ্যমে নির্দেশ দিয়েছে যে ব্যাংকগুলো এখন থেকে ব্যাংক রেজোলিউশন অধ্যাদেশ ২০২৫ অনুসারে পরিচালিত হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক ওই ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদও ভেঙে দিয়েছে।
গতকাল (৫ নভেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, “পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের ইকুইটির মূল্য এখন শূন্যের নিচে। ফলে এসব ব্যাংকের শেয়ার জিরো ভ্যালু হিসেবে বিবেচিত হবে এবং শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না।”
উল্লেখ্য, পাঁচ ব্যাংকের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার মালিকানার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে প্রায় ৬৫ শতাংশ শেয়ার, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে ৩২ শতাংশ, ইউনিয়ন ব্যাংকে ৩২ শতাংশ, এক্সিম ব্যাংকে ৩৯ শতাংশ এবং সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকে ১৯ শতাংশ।
এই পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে বাজারে আস্থার সংকট আরও গভীর হতে পারে, যা ভবিষ্যতে বিনিয়োগের প্রবাহ ও আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।