বিনোদন ডেস্ক:
দেশের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শাবনূর দীর্ঘ সময় পর আবারও চলচ্চিত্রে ফিরছেন। নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে ঢাকাই চলচ্চিত্রে একাধিক ব্যবসাসফল সিনেমা উপহার দেওয়া এই অভিনেত্রী বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস করলেও সম্প্রতি দেশে ফিরে নতুন ছবিতে অভিনয়ের ঘোষণা দিয়েছেন।
১৯৯৩ সালে পরিচালক এহতেশামের ‘চাঁদনী রাতে’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে শাবনূরের। প্রথম ছবিতেই দর্শকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। সালমান শাহর সঙ্গে একের পর এক সফল ছবিতে অভিনয় করে জুটি হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন দুজনই। সালমান শাহর মৃত্যুর পর নানা গুজবে তার নাম জড়ানোয় কষ্ট পেয়েছিলেন বলে জানান এই নায়িকা।
শাবনূর বলেন, “আমি বুঝতে পারিনি, সালমানের মৃত্যুর সঙ্গে কেন আমাকে জড়ানো হলো। এসবের কোনো কথাই সত্য নয়। সালমান আমাকে ছোট বোনের মতো দেখতেন, আর আমি তাকেও ভাইয়ের মতোই দেখতাম। আমাদের মধ্যে কেবলই বন্ধুত্ব ছিল।” তিনি আরও জানান, সালমান শাহর স্ত্রী সামিরার সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল এবং শুটিংয়ের সময় সামিরা প্রায়ই উপস্থিত থাকতেন।
চলচ্চিত্রে দীর্ঘ বিরতি নেওয়ার বিষয়ে শাবনূর বলেন, “একজন শিল্পীর ‘ব্যাক’ করার কিছু নেই। আমরা সব সময়ই ভালো গল্পের অপেক্ষায় থাকি। মনের মতো গল্প পেলেই কাজ শুরু করে দিই।” তিনি জানান, অস্ট্রেলিয়া থেকে ফেরার পর কয়েকটি নতুন প্রস্তাব পেয়েছেন, যার মধ্যে চয়নিকা চৌধুরী পরিচালিত ‘মাতাল হাওয়া’ ছবিতে তিনি অভিনয় করবেন। এতে তার সহশিল্পী থাকবেন অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ।
এ ছাড়া ‘রঙ্গনা’ নামের একটি অসম্পূর্ণ ছবির কাজ শেষ করার পরিকল্পনাও রয়েছে তার। শাবনূর বলেন, “এই ছবির গল্পটি আমার খুব ভালো লেগেছে। সময় পেলেই কাজটি শেষ করতে চাই।”
অভিনয় ক্যারিয়ারের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বিশ্বাস করেন, শিল্পীদের বয়স কোনো বাধা নয়। “শিল্পীদের বয়স বলে কিছু নেই,” বলেন শাবনূর। “যে কোনো বয়সে মনের মতো চরিত্র পেলে অভিনয় করা যায়। আমরা কাজের ক্ষেত্রে চিরসবুজ।”
ফের চলচ্চিত্রে নিয়মিত হওয়ার বিষয়ে তিনি জানান, নির্মাতারা তার কাছে নানা গল্প নিয়ে আসছেন এবং তিনি আবারও অভিনয়ে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে নিবেদন করতে চান। “আমার মন বলছে, আবারও অভিনয়ে ডুবে যাই,” বলেন তিনি।
এ ছাড়া চলচ্চিত্র নির্মাণের দিকেও মনোযোগ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন শাবনূর। অতীতে নির্মাণের উদ্যোগ নিলেও তখন চলচ্চিত্র শিল্পের সংকটজনক অবস্থার কারণে তা এগোয়নি। বর্তমান সময়কে চলচ্চিত্রের পুনর্জাগরণের সময় বলে উল্লেখ করে তিনি জানান, “এখন মনে হচ্ছে, ভালো সময় ফিরছে। তাই হয়তো এবার নির্মাণের কাজ শুরু করব।”
ব্যক্তিগত জীবনের প্রসঙ্গে এসে একমাত্র পুত্র আইজেনকে নিয়ে আবেগ প্রকাশ করেন শাবনূর। “ও খুব মেধাবী ও অভিমানী। আমার প্রতি খুব যত্নশীল,” বলেন তিনি। “আমার মনে হয়, আমি নই—ও-ই আমার অভিভাবক।”
নিজের জীবন নিয়ে তিনি বলেন, “আমার জীবনের গল্পটা অন্যরকম। ছোটবেলায় অন্যদের মতো ঘোরাঘুরি বা খেলাধুলা করার সুযোগ পাইনি। খুব অল্প বয়সেই চলচ্চিত্রে আসতে হয়েছে।” দেশে আসার পর সাধারণ মানুষের মতো ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতার কথাও জানান তিনি—“রিকশায় চড়ে বাজার করেছি, রাস্তার পাশে ঝালমুড়ি খেয়েছি। কেউ চিনতে পারেনি—এমন সাধারণ জীবনের স্বাদ নিতে ভালো লেগেছে।”
সালমান শাহর মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার স্মৃতি এখনও স্পষ্টভাবে মনে আছে বলে জানান এই নায়িকা। “প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারিনি। ভেবেছিলাম কেউ মজা করছে। পরে নিশ্চিত হয়ে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিলাম,” বলেন তিনি।
অভিনয়ে দীর্ঘ ক্যারিয়ারের পর এখন নতুন উদ্যমে আবারও চলচ্চিত্রে নিজেকে ব্যস্ত করে তুলতে চান শাবনূর। তার ভাষায়, “আমার বয়স যতই হোক, অভিনয় থেকে আমি দূরে থাকতে পারব না। দর্শকের ভালোবাসাই আমার প্রেরণা।”