আন্তর্জাতিক ডেস্ক
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সিরিয়ার রাষ্ট্রপতি আহমেদ আল-শারা এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আনাস খাত্তাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত খসড়া প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। প্রস্তাবের পক্ষে ১৪টি ভোট পড়ে, তবে চীন ভোটদানে বিরত থাকে।
জাতিসংঘ সূত্রে জানা যায়, এই সিদ্ধান্তের ফলে শারা ও খাত্তাব জাতিসংঘের আরোপিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও সম্পদ জব্দের তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। ২০১৪ সাল থেকে তারা জাতিসংঘের সন্ত্রাসবিরোধী নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিলেন। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের মাধ্যমে সিরিয়ার সঙ্গে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনর্গঠনের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি ঘটেছে বলে কূটনৈতিক মহল মনে করছে।
ওয়াশিংটন গত কয়েক মাস ধরে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে সিরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার আহ্বান জানিয়ে আসছিল। মে মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়ার ওপর থেকে একতরফাভাবে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ববর্তী নীতির একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হিসেবে দেখা হয়।
মার্কিন প্রশাসন জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের লক্ষ্য সিরিয়ার অভ্যন্তরে চলমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারে সহযোগিতা করা। তবে এ পদক্ষেপকে ঘিরে কিছু পশ্চিমা রাষ্ট্রের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাদের মতে, এই সিদ্ধান্ত সিরিয়ায় মানবাধিকার ও জবাবদিহির প্রশ্নকে দুর্বল করতে পারে।
বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “আমি মনে করি প্রেসিডেন্ট শারা খুব ভালো কাজ করছেন। তিনি একজন কঠোর নেতা, কিন্তু আমাদের সম্পর্ক ভালো এবং সিরিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে অনেক অগ্রগতি হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছি যাতে তারা তাদের দেশ পুনর্গঠনে মনোযোগ দিতে পারে।”
জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে আল-কায়েদা ও সিরিয়ার বিদ্রোহী সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)-এর মধ্যে সক্রিয় সম্পর্কের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১৬ সালে এইচটিএস আল-কায়েদার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক ছিন্ন করে, যদিও এটি জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা তালিকায় এখনও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
২০১৪ সালের মে মাস থেকে এইচটিএসের সদস্যদের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, সম্পদ জব্দ এবং অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছিল। তবে সর্বশেষ পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সিরিয়ার নতুন সরকার এবং এই সংগঠনের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের কোনো ইঙ্গিত নেই। এর প্রেক্ষিতে নিরাপত্তা পরিষদ নিষেধাজ্ঞা পর্যালোচনা করে এবং প্রেসিডেন্ট শারা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খাত্তাবের নাম তালিকা থেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয়।
সিরিয়ায় ১৩ বছরের দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের পর গত ডিসেম্বর মাসে ইসলামপন্থী সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)-এর নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতাচ্যুত করে সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে। পরবর্তীতে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের নেতৃত্বে ক্ষমতা গ্রহণ করেন আহমেদ আল-শারা। নতুন প্রশাসন ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে দেশটিতে সীমিত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে বলে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর জানিয়েছে।
এদিকে, আগামী সোমবার হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার বৈঠকের কথা রয়েছে। আলোচনায় সিরিয়ার পুনর্গঠন, নিরাপত্তা সহযোগিতা ও মানবিক সহায়তা কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হবে বলে হোয়াইট হাউস সূত্র জানিয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের এই সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যের নতুন ভূরাজনৈতিক সমীকরণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব পুনঃস্থাপনের ইঙ্গিত দেয়। একই সঙ্গে এটি সিরিয়াকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার একটি কূটনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবেও দেখা হচ্ছে।