অর্থনীতি ডেস্ক
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত সপ্তাহে (২–৬ নভেম্বর) শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে বড় ধরনের দরপতন দেখা গেছে। সপ্তাহজুড়ে মোট লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে মাত্র ৪০টির, বিপরীতে কমেছে ৩৪০টির। দরপতনের এই প্রভাবে এক্সচেঞ্জটির সবগুলো সূচক নিম্নমুখী হয়েছে, আর বাজার মূলধন কমেছে ৮ হাজার ৬৩১ কোটি টাকার বেশি।
গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১৫৪ পয়েন্ট বা ৩ শতাংশ কমে ৪ হাজার ৯৬৮ পয়েন্টে নেমে এসেছে। আগের সপ্তাহ শেষে সূচকটি ছিল ৫ হাজার ১২২ পয়েন্টে।
একইভাবে, বাছাই করা ৩০টি কোম্পানির শেয়ার নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ৪৭ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৩৭ শতাংশ কমে ১ হাজার ৯৪১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, যা আগের সপ্তাহে ছিল ১ হাজার ৯৮৮ পয়েন্ট।
অন্যদিকে, ডিএসইএস সূচক ৪৩ পয়েন্ট বা ৪ শতাংশ কমে ১ হাজার ৩৯ পয়েন্টে নেমেছে, যা আগের সপ্তাহে ছিল ১ হাজার ৮৩ পয়েন্ট।
সূচকের এই পতনের ফলে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার সম্পদের সামগ্রিক মূল্য কমে গেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। সপ্তাহ শেষে ডিএসইর মোট বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯০ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা, যা আগের সপ্তাহের ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা থেকে ৮ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা কম।
সূচক ও মূলধনে বড় পতন সত্ত্বেও গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। পাঁচ কার্যদিবসে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৪২২ কোটি ২৪ লাখ টাকার, যা আগের সপ্তাহের ২ হাজার ২৮৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকার তুলনায় ১৩৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা বেশি।
গড়ে প্রতিদিনের লেনদেন দাঁড়িয়েছে ৪৮৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, যেখানে আগের সপ্তাহে দৈনিক গড় লেনদেন ছিল ৪৫৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৮৯টি কোম্পানির শেয়ার, করপোরেট বন্ড ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৪০টির দর বেড়েছে, ৩৪০টির কমেছে এবং ৯টির দর অপরিবর্তিত ছিল।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর কমে যাওয়ার পেছনে বিনিয়োগকারীদের আস্থা হ্রাস, বাজারে তারল্য ঘাটতি এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
একই সময়ে দেশের দ্বিতীয় পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দরপতনের প্রবণতা দেখা গেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রধান সূচক সিএএসপিআই ২ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং সিএসসিএক্স ২ দশমিক ৪০ শতাংশ কমে যথাক্রমে ১৩ হাজার ৯৫৯ পয়েন্ট ও ৮ হাজার ৬১৬ পয়েন্টে নেমে এসেছে।
সিএসইর অন্যান্য সূচকের মধ্যে সিএসআই সূচক ২ দশমিক ৬৬ শতাংশ কমে ৮৭৫ পয়েন্টে এবং সিএসই-৫০ সূচক ১ দশমিক ৭৮ শতাংশ কমে ১ হাজার ৭০ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে। সিএসই-৩০ সূচকও ১ দশমিক ৮৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৪১৩ পয়েন্টে।
গত সপ্তাহে সিএসইতে ৩০০টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৬৭টির দর বেড়েছে, ২১২টির কমেছে এবং ২১টির দর অপরিবর্তিত ছিল।
সপ্তাহজুড়ে মোট লেনদেন হয়েছে ৯৭ কোটি ২০ লাখ টাকার, যা আগের সপ্তাহের ৯৮ কোটি ২৪ লাখ টাকার তুলনায় সামান্য কম।
সপ্তাহজুড়ে দুই প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জেই সূচক, লেনদেন এবং মূলধনের পতন বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা হ্রাসের ইঙ্গিত দেয়। বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, শেয়ারদরের ধারাবাহিক পতন রোধে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যকর পদক্ষেপ এবং নীতিগত সহায়তা জরুরি হয়ে পড়েছে।