আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের পশ্চিম সিংভূম জেলার সরকারি সদর হাসপাতালে রক্ত সঞ্চালনের পর পাঁচ শিশু এইচআইভি পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। সরকারি ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত নেওয়ার পর এই ঘটনা ঘটায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি সম্প্রতি প্রকাশ্যে আসার পর হাসপাতালের সিভিল সার্জন, এইচআইভি ইউনিটের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক এবং সংশ্লিষ্ট টেকনিশিয়ানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
ঘটনার পর ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন আক্রান্ত শিশুদের পরিবারকে দুই লাখ রুপি করে ক্ষতিপূরণ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পশ্চিম সিংভূমের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট চন্দন কুমার জানিয়েছেন, ২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে জেলায় মোট ২৫৯ জন রক্তদাতা রক্ত দিয়েছেন। এর মধ্যে ৪৪ জনের তথ্য যাচাই করা হয়, যেখানে চারজন দাতা এইচআইভি পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হন। তিনি জানান, বাকিদেরও পরীক্ষা ও যাচাইয়ের কাজ চলছে যাতে অন্য কোনো দাতা সংক্রমিত ছিলেন কি না তা নিশ্চিত করা যায়।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে ধারণা করা হচ্ছে, ব্লাড ব্যাংকের রক্তদাতাদের যথাযথ স্ক্রিনিং প্রক্রিয়ার ঘাটতির কারণেই এইচআইভি সংক্রমণ ঘটেছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংক্রমণের মূল উৎস শনাক্ত ও দায় নির্ধারণে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে।
রাজ্যের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী রামচন্দ্র চন্দ্রবংশী এ ঘটনাকে প্রশাসনিক অবহেলার ফল বলে অভিহিত করেছেন। তার মতে, সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন, ফলে শিশুদের জীবনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
অন্যদিকে, ঝাড়খণ্ডের বিশেষ স্বাস্থ্য সচিব ডা. নেহা অরোরা জানান, বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন এবং প্রাথমিকভাবে কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়নি। তিনি বলেন, “দাতাদের রক্ত পরীক্ষার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত কিটের মান ও পদ্ধতি যাচাই করা হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সে জন্য নতুন গাইডলাইন জারি করা হবে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, রক্তদাতাদের রক্ত পরীক্ষায় যদি প্রি-কিট ব্যবহার করা হয়, তাহলে ‘উইন্ডো পিরিয়ড’ দীর্ঘ হয়—ফলে দাতার রক্তে ভাইরাস থাকলেও তা শনাক্ত হতে বিলম্ব ঘটে। অন্যদিকে, এলিসা বা এনএটি (NAT) পরীক্ষায় ভাইরাস দ্রুত ধরা পড়ে, কারণ এই পরীক্ষাগুলো অ্যান্টিজেন শনাক্ত করতে সক্ষম।
ডা. অরোরা জানান, বর্তমানে ঝাড়খণ্ডে রক্ত পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রি-কিট ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং সব কেন্দ্রকে উন্নতমানের এলিসা বা এনএটি টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
অ্যাক্টিভিস্ট অতুল গেরা জানান, রাজ্যে প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি থ্যালাসেমিয়া রোগী থাকলেও পুরো রাজ্যে মাত্র একজন হেমাটোলজিস্ট রয়েছেন। তার মতে, পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও আধুনিক পরীক্ষাগার না থাকায় রক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঝাড়খণ্ডের জনস্বাস্থ্য খাতে দায়িত্ব ও জবাবদিহিতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রক্তদাতা শনাক্তকরণ, স্ক্রিনিং প্রক্রিয়া এবং ল্যাব ব্যবস্থাপনা জোরদার না হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব হবে না।
রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে জেলা পর্যায়ে সব ব্লাড ব্যাংকের কার্যক্রম পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।