আন্তর্জাতিক ডেস্ক
তুরস্ক ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুসহ তার সরকারের ৩৭ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। শুক্রবার (৭ নভেম্বর) ইস্তাম্বুলের শীর্ষ সরকারি কৌঁসুলির দপ্তর থেকে এ পরোয়ানা জারি করা হয়।
প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ, জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন-গিভর এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়া’আল জামিরসহ আরও কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।
তুর্কি কৌঁসুলির দপ্তরের জারি করা পরোয়ানায় গাজায় গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গত সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক ত্রাণবাহী জোট ‘ফ্লোটিলা’র বহর আটকে দেওয়ার অভিযোগ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তুরস্কের আইনি কর্তৃপক্ষের মতে, এসব অপরাধ আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের সামিল।
ইসরায়েল এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদন সা’র এক বিবৃতিতে বলেন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করছেন। তিনি এই পরোয়ানাকে “একটি জনসংযোগ কৌশল” হিসেবে অভিহিত করেন এবং দাবি করেন, তুরস্ক নিজ দেশে বিচারক, সাংবাদিক ও স্থানীয় প্রশাসকদের দমন করতে বিচারব্যবস্থাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
অন্যদিকে, গাজা নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস তুরস্কের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। সংগঠনটির হাইকমান্ডের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “গাজা ইস্যুতে তুরস্কের জনগণ ও নেতৃত্বের অবস্থান এই পদক্ষেপের মাধ্যমে আরও স্পষ্ট হলো।”
তুরস্কের এই পদক্ষেপ এমন সময়ে এলো, যখন গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে। যুদ্ধবিরতির মধ্যেও ইসরায়েলি বাহিনী ও ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের মধ্যে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটছে, যা শান্তি প্রচেষ্টাকে অনিশ্চিত করে তুলেছে।
এর আগে, গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে হাজারো ফিলিস্তিনি বেসামরিক মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র নিন্দা ও আইনি পদক্ষেপের দাবি ওঠে। গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করে। পরে তুরস্ক সেই মামলায় বাদিপক্ষ হিসেবে নিজেদের নাম যুক্ত করে।
বিশ্লেষকদের মতে, তুরস্কের এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক সম্পর্ক ও আঞ্চলিক ভারসাম্যে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। আঙ্কারা দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনি অধিকারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আসছে এবং গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের তীব্র বিরোধিতা করছে।
গাজা সংকটের প্রেক্ষাপটে তুরস্কের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আদালতে চলমান মামলার প্রক্রিয়াতেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এখন ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের ওপর আরও নজরদারি বাড়াতে পারে।
বর্তমানে গাজায় মানবিক পরিস্থিতি চরম অবনতির দিকে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, চলমান সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৩৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। একই সঙ্গে খাদ্য, ওষুধ ও আশ্রয়ের সংকটে লাখো মানুষ মানবিক সহায়তার অপেক্ষায় রয়েছেন।
তুরস্কের এই সিদ্ধান্তকে অনেক আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মানবাধিকার রক্ষায় একটি প্রতীকী পদক্ষেপ হিসেবে দেখলেও, বাস্তবে ইসরায়েলি নেতাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনো তাৎক্ষণিক আইনগত প্রভাব পড়বে কি না—তা এখনো অনিশ্চিত। তবে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আঙ্কারা ও তেল আবিবের কূটনৈতিক সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।