বিনোদন ডেস্ক:
ভারতীয় জাতীয় দলের পেসার মোহাম্মদ শামির সঙ্গে বিচ্ছেদের পর থেকে প্রতি মাসে ৪ লাখ টাকা ভরণপোষণ পাচ্ছেন তার সাবেক স্ত্রী মডেল ও অভিনেত্রী হাসিন জাহান। তবে এই অর্থে সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ করে তিনি ভরণপোষণের পরিমাণ বৃদ্ধির আবেদন জানিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্টে।
সুপ্রিম কোর্ট ইতোমধ্যে হাসিন জাহানের আবেদন গ্রহণ করে শামি এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে নোটিশ পাঠিয়েছে। আদালত আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে জবাব দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে। পরে মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হবে।
হাসিন জাহানের বর্তমান আবেদন অনুযায়ী, তিনি মনে করেন মাসিক ৪ লাখ টাকায় তার এবং মেয়ের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। শীর্ষ আদালতে তিনি দাবি করেছেন, শামির মাসিক আয় প্রায় ৬০ লাখ টাকা হওয়ায় বর্তমান ভরণপোষণ তাদের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
এর আগে ২০২৫ সালের জুলাই মাসে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে শামিকে প্রতি মাসে মোট ৪ লাখ টাকা ভরণপোষণ দিতে বলা হয়। এর মধ্যে আড়াই লাখ টাকা মেয়ের জন্য এবং দেড় লাখ টাকা হাসিনের জন্য নির্ধারিত হয়। ওই রায়ের ভিত্তিতেই শামি নিয়মিত অর্থ প্রদান করে আসছেন।
তবে তার আগে নিম্ন আদালতে এই অর্থের পরিমাণ নিয়ে একাধিকবার শুনানি হয়েছে। প্রথমে আলিপুর আদালত শামিকে কেবল মেয়ের জন্য মাসে ৮০ হাজার টাকা দিতে নির্দেশ দেয়। পরে জেলা জজ আদালত সেই নির্দেশ সংশোধন করে হাসিন জাহানকেও মাসে ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর হাইকোর্টে আবেদন করলে আদালত উভয়ের জন্য মোট ৪ লাখ টাকার ভরণপোষণ নির্ধারণ করে।
২০১৪ সালে মোহাম্মদ শামি ও হাসিন জাহানের বিয়ে হয়। পরের বছর তাদের কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। তবে বিবাহিত জীবনে নানা জটিলতা দেখা দিলে ২০১৮ সালে যাদবপুর থানায় শামি ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ দায়ের করেন হাসিন জাহান। অভিযোগগুলোর মধ্যে পারিবারিক নির্যাতন ও মানসিক নিপীড়নের বিষয়ও ছিল।
একই বছর তিনি ‘প্রোটেকশন অব উইমেন ফ্রম ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স অ্যাক্ট, ২০০৫’-এর অধীনে মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনি নিজের জন্য মাসে ৭ লাখ এবং মেয়ের জন্য ৩ লাখ টাকা দাবি করেন, পাশাপাশি মামলার খরচ ও অন্তর্বর্তীকালীন ভরণপোষণ বাবদ ১০ লাখ টাকার আবেদন করেন।
তবে নিম্ন আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর না করে তুলনামূলক কম পরিমাণ ভরণপোষণ নির্ধারণ করে। পরবর্তীতে একাধিক আদালতে মামলাটি চলতে থাকে, এবং শেষ পর্যন্ত কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশেই বর্তমান ৪ লাখ টাকার ভরণপোষণ কার্যকর হয়।
সুপ্রিম কোর্টে নতুন আবেদনের পর এখন বিষয়টি আবারও বিচারাধীন। আদালত পর্যবেক্ষণ করেছে, “মাসে চার লাখ টাকা কি যথেষ্ট নয়?”—এই মন্তব্যের পরেই আদালত শামি ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে চার সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে নির্দেশ দেয়।
এই মামলার ফলাফল প্রকাশিত হলে তা ভবিষ্যতে ক্রিকেটার ও তাদের পরিবারের আইনি আর্থিক দায়বদ্ধতার দিক থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে বলে আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।