আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারতের বিহার রাজ্যে অনুপ্রবেশের অভিযোগ তুলে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা চালানোর অভিযোগে ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটকে কঠোরভাবে সমালোচনা করেছেন অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম)-এর প্রধান ও হায়দরাবাদ আসনের সংসদ সদস্য আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। তিনি বলেন, সরকার মুসলিমদের উন্নয়নকে উপেক্ষা করে এখন তাদের বদনাম করার রাজনীতি চালাচ্ছে।
বিহার বিধানসভার দ্বিতীয় দফা ভোটের আগে কিশনগঞ্জে এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওয়াইসি বলেন, “এখানে (বিহারে) কি সোনার খনি আবিষ্কার হয়েছে? আমি বুঝতাম যদি সেখানে তেল পাওয়া যেত, তাহলে মানুষ ভিড় করতো। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, কাজের অভাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যুবকরা ঘুরে বেড়াচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, সীমানচলের মুসলিমরা দেশভাগের সময় বাংলাদেশে না গিয়ে ভারতকেই নিজেদের দেশ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। তাই আজ তাদের অনুপ্রবেশকারী বলা অন্যায্য ও অপমানজনক।
৫৬ বছর বয়সী এই রাজনীতিক অভিযোগ করেন, যদি সত্যিই অনুপ্রবেশ ঘটে থাকে, তবে তার দায় বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের। ওয়াইসি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমার, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী—সবাই আপনারা। তাহলে অনুপ্রবেশকারীরা এলেন কীভাবে? এর মানে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। বিএসএফ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী আপনারাই নিয়ন্ত্রণ করেন, তবুও সীমান্তে অনুপ্রবেশ হচ্ছে—এটা সরকারের অক্ষমতার প্রমাণ।”
তিনি বিজেপির কাছে প্রশ্ন রাখেন, “আপনারা বলেন অনুপ্রবেশ হচ্ছে, তাহলে অন্তত ১০ জন অনুপ্রবেশকারীর নাম প্রকাশ করুন। মুসলিম সমাজের জন্য কিছুই করা হয়নি, বরং তাদের প্রতি বৈষম্য ও অবহেলা করা হয়েছে। এখন তাদেরই দোষারোপ করে রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়া হচ্ছে।”
ওয়াইসি অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য উভয় সরকারই সীমানচল অঞ্চলের উন্নয়নে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ। ওই অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও অবকাঠামোগত সংকটে ভুগছেন।
২০২০ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনে ওয়াইসির নেতৃত্বাধীন এআইএমআইএম সীমানচল অঞ্চলে পাঁচটি আসনে জয়লাভ করে আলোচনায় আসে। এ অঞ্চলেই রাজ্যের প্রায় ১৭ শতাংশ মুসলিম ভোটার বাস করেন, যা রাজ্যের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সাক্ষাৎকারে বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধীর সাম্প্রতিক ভোট কারচুপির অভিযোগ সম্পর্কেও মন্তব্য করেন ওয়াইসি। তিনি বলেন, “যদি ভোট নিয়ে সত্যিই অনিয়ম হয়ে থাকে, তবে ভোটার তালিকা তিন দফায় খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। গণতন্ত্রে স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করতে এটি অত্যন্ত জরুরি।”
ওয়াইসি আরও বলেন, “বিহার বা ভারতের কোনো অঞ্চলেই মুসলিমরা দেশের বাইরে থেকে এসে বসতি গড়েননি। তারা এই দেশেরই নাগরিক, এবং ভারতের সংবিধান অনুযায়ী সমান অধিকার তাদের প্রাপ্য।”
তার এই মন্তব্য বিহার নির্বাচনের আগে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, অনুপ্রবেশ ও ধর্মীয় রাজনীতি বিষয়ক বিতর্ক নির্বাচনী প্রচারে নতুন মাত্রা যোগ করছে, যা মুসলিম অধ্যুষিত সীমানচল অঞ্চলে ভোটের ফলাফলে প্রভাব ফেলতে পারে।