খেলাধুলা ডেস্ক
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নতুন ইতিহাস গড়লেন ভারতের তরুণ ব্যাটার অভিষেক শর্মা। মাত্র ৫২৮ বল খেলে এক হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করে তিনি বিশ্ব ক্রিকেটে দ্রুততমদের তালিকায় নাম তুলেছেন। একই সঙ্গে ম্যাচের হিসেবে দ্বিতীয় দ্রুততম ভারতীয় ব্যাটার হিসেবে এই কৃতিত্ব অর্জন করেছেন তিনি।
শনিবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্রিসবেনের দ্য গ্যাবা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত পঞ্চম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে এই রেকর্ড গড়েন অভিষেক। বাঁহাতি এই ব্যাটার ভেঙেছেন অস্ট্রেলিয়ার টিম ডেভিডের রেকর্ড, যিনি ৫৬৯ বলে এক হাজার রান পূর্ণ করেছিলেন। ২ নভেম্বর হোবার্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৮ বলে ৭৪ রানের ইনিংস খেলে টিম ডেভিড এই কীর্তি স্থাপন করেছিলেন। তবে অভিষেক আরও ৪১ বল কম খেলে নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়েন।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সাধারণত দ্রুততম এক হাজার রান করতে ব্যাটারদের ধারাবাহিকতা ও আক্রমণাত্মক মানসিকতা বড় ভূমিকা রাখে। অভিষেকের ক্ষেত্রে সেটিই প্রমাণিত হলো। ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর থেকে তিনি আক্রমণাত্মক ওপেনিং ব্যাটিংয়ের মাধ্যমে নিজেকে দলের নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
তবে ইনিংসের হিসেবে তিনি অল্পের জন্য রেকর্ড হাতছাড়া করেন। অভিষেক গ্যাবায় নিজের ২৮তম ইনিংসে এক হাজার রানে পৌঁছান। ভারতের ব্যাটারদের মধ্যে সবচেয়ে কম ইনিংসে এই মাইলফলক স্পর্শ করেছেন বিরাট কোহলি—মাত্র ২৭ ইনিংসে। ফলে ইনিংসের হিসেবে কোহলির পরেই অবস্থান করছেন অভিষেক।
বিশ্ব ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত যে কয়জন ব্যাটার এক হাজার রানে পৌঁছাতে সবচেয়ে কম বল খেলেছেন, তাদের মধ্যে অভিষেকের অবস্থান শীর্ষে। তার আগে এমন কৃতিত্ব অর্জন করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার কুইন্টন ডি কক, ইংল্যান্ডের জস বাটলার ও পাকিস্তানের মোহাম্মদ রিজওয়ান—তবে বলের হিসাবে সবাই অভিষেকের পেছনে।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চলমান সিরিজে অভিষেকের ধারাবাহিক পারফরম্যান্স ভারতের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। প্রথম চার ম্যাচে ৩০-এর বেশি গড় বজায় রেখে তিনি একাধিক ম্যাচে দলের জয়ে অবদান রেখেছেন। শেষ ম্যাচে ৪২ বলে ৬৮ রানের ইনিংস খেলেই তিনি নতুন এই রেকর্ড গড়েন।
বিশ্লেষকদের মতে, অভিষেক শর্মার এই অর্জন ভারতীয় টি-টোয়েন্টি দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় নতুন দিক নির্দেশনা দেবে। আসন্ন ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে দল ব্যবস্থাপনায় তরুণদের ভূমিকা বাড়ানোর যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, অভিষেক তারই প্রতীকী উদাহরণ হয়ে উঠেছেন।
তার এই পারফরম্যান্স শুধু ব্যক্তিগত মাইলফলক নয়, ভারতের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং দর্শনের প্রতিফলনও বটে। বিশেষ করে পাওয়ারপ্লেতে তার দ্রুত রান তোলার দক্ষতা দলকে শক্তিশালী সূচনা এনে দিচ্ছে। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারলে ভবিষ্যতে অভিষেক ভারতীয় টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ের অন্যতম স্তম্ভ হয়ে উঠতে পারেন।
সিরিজের সমাপ্তির পর বোর্ড অফ কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) তরুণ এই ব্যাটারকে বিশেষ প্রশংসা জানিয়েছে। দলের কোচিং স্টাফও জানিয়েছেন, অভিষেকের ফিটনেস ও ফোকাস তাকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে সাহায্য করবে।
অভিষেক শর্মার এই রেকর্ড ভারতের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নতুন মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের খেলোয়াড়দের অনুপ্রেরণা জোগাবে।