অর্থনীতি ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রে আগামী তিন বছরে ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রতিষ্ঠান মেটা। এই বিপুল বিনিয়োগের আওতায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চালিত ডেটা সেন্টার নির্মাণ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এক নৈশভোজে মেটার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মার্ক জুকারবার্গ এই বিনিয়োগ পরিকল্পনার কথা জানান। তিনি বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে যাচ্ছি। এটি আমাদের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত পদক্ষেপ, যার মাধ্যমে ভবিষ্যতের প্রযুক্তিগত চাহিদা পূরণে আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকতে চাই।”
মেটা ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে একাধিক ডেটা সেন্টার নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, টেক্সাসে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নতুন একটি এআই-চালিত ডেটা সেন্টার নির্মাণ করা হবে। এটি মেটার বৈশ্বিক নেটওয়ার্কে ২৯তম ডেটা সেন্টার হিসেবে যুক্ত হবে। একই সঙ্গে লুইজিয়ানায় বৃহত্তম অবকাঠামোগত প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগ সংস্থা ব্লু আউল ক্যাপিটালের সঙ্গে ২৭ বিলিয়ন ডলারের ফাইন্যান্সিং চুক্তি সম্পন্ন করেছে।
অক্টোবরে প্রকাশিত মেটার সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এআই ও সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির কারণে ২০২৬ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানের মূলধন ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভবিষ্যতের জন্য উন্নত কম্পিউটিং সক্ষমতা অর্জন ও তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো শক্তিশালী করার লক্ষ্যে মেটা ইতিমধ্যে বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে।
জুকারবার্গ বলেন, “আমরা আমাদের কম্পিউটিং সক্ষমতা অগ্রিম বৃদ্ধি করছি, যাতে সর্বাধিক ইতিবাচক প্রযুক্তিগত পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে পারি।”
বিশ্লেষকদের মতে, মেটার এই ব্যাপক বিনিয়োগ পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠানটিকে বৈশ্বিক এআই প্রতিযোগিতায় শীর্ষস্থানীয় অবস্থানে রাখবে। একই সঙ্গে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি শিল্পে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ডেটা অবকাঠামো উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা আরও মনে করছেন, মেটার এই বিনিয়োগ সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মের বাইরেও প্রতিষ্ঠানটির কৌশলগত দিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এআই, ক্লাউড কম্পিউটিং ও মেটাভার্স প্রযুক্তিতে সম্প্রসারণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি ভবিষ্যতের প্রযুক্তি নির্ভর সেবা প্রদানে নিজেকে প্রস্তুত করছে।
বিশ্বব্যাপী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিযোগিতা তীব্র আকার ধারণ করেছে। গুগল, মাইক্রোসফট, ও অ্যামাজনের মতো প্রযুক্তি জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকতে মেটার এই বৃহৎ বিনিয়োগ কৌশলকে বিশেষজ্ঞরা একটি অগ্রগামী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
মেটার এই উদ্যোগ কেবল প্রতিষ্ঠানটির প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াবে না, বরং যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি খাতের বিকাশ, কর্মসংস্থান সম্প্রসারণ এবং এআই-ভিত্তিক উদ্ভাবনী সমাধান উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।